বিভাব নাটকের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর - Bivab Descriptive Question Answer

বিভাব নাটকের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর PDF: প্রতিবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় Bivab Descriptive Question Answer PDF থেকে অনেক প্রশ্ন আসে। তাই আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি বিভাব নাটকের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর PDF


বিভাব নাটকের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর - Bivab Descriptive Question Answer

নিচে বিভাব নাটকের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর PDF টি যত্নসহকারে পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন। Bivab Descriptive Question Answer PDF পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ন।



বিভাব - শম্ভু মিত্র


‘বিভাব’ নাটকটি একটি নির্দিষ্ট বিষয় স্থির রেখে "বহুরূপী" নাট্য গোষ্ঠীর সদস্যরা নিজেদের সংলাপ নিজেই বানিয়ে নিয়ে যে নাটক রচনা করেন, তা পরবর্তীতে শম্ভু মিত্র গ্রন্থাগারে সাজিয়ে এই নাটকটির নাম দেন 'বিভাব'। নাটকের রচয়িতা ছিল বহুরূপী সদস্যরা। কিন্তু পরবর্তীতে নাট্যকার হিসেবে নাম রাখা হয় শম্ভু মিত্রের। আলোচ্য পোস্টে শম্ভু মিত্রের ‘বিভাব’ নাটকের গুরুত্বপূর্ণ বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন (MCQ), অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (SAQ), সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল।


বিভাব নাটকের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর - Bivab Descriptive Question Answer


1. “আমাদের মনে হয় এর নাম হওয়া উচিত ‘অভাব নাটক’।” ”–অভাবের চিত্র ‘বিভাব’ নাটকে কীভাবে প্রকাশ পেয়েছে লেখো।

অথবা,

‘বিভাব’-এর মতো মঞ্জুসজ্জা ও অন্যান্য নাট্য উপকরণ ছাড়া নাটক প্রযোজনার বাসনা বহুরূপী নাট্যগোষ্ঠীর মনে এল কীভাবে?

Ans: শম্ভু মিত্র রচিত ‘বিভাব’ নাটকের শুরুতেই স্বয়ং নাট্যকার শম্ভু মিত্রের জবানিতে অপেশাদার নাট্যগোষ্ঠীগুলির সমস্যার কথা ফুটে উঠেছে। গ্রুপ থিয়েটারগুলির নাট্য-প্রযোজনার আন্তরিক ইচ্ছা থাকলেও আর্থিক ও অন্যান্য নাট্য-উপাদান, সর্বোপরি মঞ্চের অভাব বাধা হয়ে দাঁড়াত। তাই বহুরূপী নাট্যগোষ্ঠীর সংকটমোচনের প্রত্যাশায় ‘বিভাব’-এর মতো ব্যতিক্রমী নাট্যপ্রয়াস।

নাটক যে দীর্ঘ সংলাপ দিয়ে শুরু হয়েছে, সেখানেই শম্ভু মিত্র বলেছেন এ নাটকের নাম হওয়া উচিত ‘অভাব নাটক’। গ্রুপ থিয়েটারগুলির নাট্য-প্রযোজনার ক্ষেত্রে বড়ো বাধা ছিল নাট্যমঞ্চ ৷ যে কয়টি সরকারি বা বেসরকারি নাট্যমঞ রয়েছে সেগুলি বহুরূপীর মতো নাট্যদলকে কেউ ভাড়া দিতে চান না। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা প্রদান তো দুরের কথা, উপরস্তু থাকে করের বোঝা।

সেই সঙ্গে প্রচলিত ধারায় নাট্য প্রযোজনার ক্ষেত্রে যেসব সিনসিনারি, আলো, ঝালর ইত্যাদি প্রয়োজন সেগুলিও এদের ছিল না। এরকম পরিস্থিতিতে ‘বিভাব’-এর মতো নাট্য-প্রযোজনার ভাবনা মাথায় এল বহুরূপী গোষ্ঠীর। এ নাটকে স্টেজের দরকার হবে না, দরজা, জানালা, সিনসিনারি কিছুই দরকার হবে না—একটা যে কোনো রকম প্ল্যাটফর্ম হলেই চলবে। সর্বোপরি, এরকম প্রযোজনার জন্য সরকার খাজনা আদায়ের খাতা হাতে হাজিরও হবে না।


2. “তাই অনেক ভেবেচিন্তে আমরা একটা প্যাচ বের করেছি।”—এখানে যে প্যাচের কথা বলা হয়েছে তার বিবরণ দাও। নাট্যকার এত ভাবনাচিন্তা কেন। করেছিলেন?

Ans: প্রখ্যাত নাট্যকার শম্ভু মিত্র তাঁর প্রখ্যাত একাঙ্কিকা ‘বিভাব’-এর প্রাকৃভাষণ অংশে নাট্যাভিনয়ের অভিনব রীতিপদ্ধতি বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। ‘বিভাব’ নাটকটিকে মঞ্জুস্থ করার পদ্ধতি বিষয়ে এক বিশেষ ‘প্যঁাঁচ’-এর আশ্রয় গ্রহণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে নাট্যকারের বক্তব্যানুযায়ী, নাটক পরিবেশনার জন্য অঢেল উপকরণ, বিশালকায় নাট্যমঞ্চ কিংবা সাজসজ্জা নিষ্প্রয়োজন। যে-কোনো রকম একটা প্ল্যাটফর্ম হলেই ‘বিভাব’ নাটক অভিনয় করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে নাটকের কুশীলববৃন্দ আপন অভিনয়গুণেই বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির দ্বারা অনুপস্থিত বস্তুসামগ্রীর প্রতীতি সৃষ্টি করে এই স্বয়ংসম্পূর্ণ নাটক পরিবেশন করতে পারে।

গণনাট্য সংঘ থেকে পৃথক হওয়ার পর নাট্যকার শম্ভু মিত্র যখন বহুরূপী নাট্যগোষ্ঠীর সূত্রপাত ঘটান তখন তাদের প্রভূত অর্থাভাবের সম্মুখীন হতে হয়। নাট্যকারের বক্তব্য অনুযায়ী তাদের ‘বিভাব’ নাটকটিরও জন্ম ‘দুরন্ত অভাব’ থেকে। সে সময় তাদের না ছিল কোনো ভালো স্টেজ, না ছিল সিনসিনারি, আলোকসজ্জা, ঝালর কিংবা প্রয়োজনীয় সরঞ্জামসমূহ। নাট্যকারের মন্তব্যানুযায়ী— “থাকবার মধ্যে আছে কেবল নাটক করবার বোকামিটা।” কিন্তু সরকারি কর্তৃপক্ষ বিচিত্র সাঁড়াশি ভঙ্গিতে বলপূর্বক কর আদায় করত। নাট্যকার জানান সরকারের সেই অত্যাচারের প্রেক্ষিতে বহু কষ্টে জোগাড় করা অর্থটুকুও তাদের হস্তচ্যুত হত এবং— “আমরা সর্বস্ব দিয়ে থুয়ে আবার ‘ব্যোমকালী’ বলে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি।” তবে অনাচার ও শোষণ যতই প্রবল হোক না কেন অভিনয়ের উন্মত্ত বাসনা তাদের অন্তর থেকে দূরীভূত হতে পারেনি। তাই তাঁরা সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নিয়মের এই ‘ফাঁক’-টির আবিষ্কার করেন। এই বিচিত্র কৌশলের প্রয়োগে তাঁরা একই সঙ্গে যেমন নাট্য-প্রদর্শনের ব্যয়ভারকে সংকুচিত করতে সমর্থ হন তেমনি সরকারি অনাচারেরও প্রতিকার বিধান করেন।


3. “বুদ্ধিটা কী করে এল তা বলি।” – কোন্ বুদ্ধিটার কথা বলা হয়েছে? কীভাবে সেই বুদ্ধিটা বক্তার মাথায় এলো ?

অথবা,

“যথেষ্ট মঞসজ্জা বা উপকরণ ছাড়া নাট্যবক্তব্য প্রকাশ সম্ভব” ‘–এ বক্তব্যের সমর্থনে ‘বিভাব’ নাটকে দেশি-বিদেশি যে সকল দৃষ্টান্ত রয়েছে তার উল্লেখ করো।

Ans: শম্ভু মিত্র রচিত ‘বিভাব’ নাটকে উক্তিটি করেছেন নাট্যকার শম্ভু মিত্র স্বয়ং। অপেশাদার নাট্যদল বহুরূপী নাট্য- প্রযোজনার ক্ষেত্রে যে সকল বাধার সম্মুখীন হয়েছিল সেগুলির সমাধানকল্পে এক ভিন্ন ধারার নাট্য-প্রযোজনার ভাবনার কথা এখানে বলা হয়েছে। এই ভাবনা অনুযায়ী প্রচলিত মঞ্চ, মঞ্চসজ্জা এসবের প্রয়োজন হবে না, যে-কোনো রকম একটা প্ল্যাটফর্ম হলেই এ নাটক উপস্থাপন করা যাবে।

শম্ভু মিত্র এরকম ভিন্ন রীতির ভাবনার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন দেশি ও বিদেশি কিছু উদাহরণ থেকে।

যেমন—পুরোনো কোনো এক বাংলা নাটকে লেখা আছে— ‘রাজা রথারোহণম নাটয়তি’—অর্থাৎ রাজা রথে আরোহণ করার ভঙ্গি করলেন। রথ বা ঘোড়ার উপস্থিতি ছাড়াই দর্শকরা মনে করলেন রাজা রথে চড়লেন।

ওড়িশার এক নাটকে রাজা দূতকে বললেন—“তমে ঘোড়া নেইকরি চঞ্চল খবর নেই আসিবি।” –দূত অমনি দুই পায়ের ফাঁকে একটা লাঠি গলিয়ে ঘোড়ায় চড়ার ভঙ্গি করল। দর্শক অত্যন্ত গম্ভীরভাবে মেনে নিল যে, দূত ঘোড়ায় চড়ে গেল এবং ফিরে এল।

আবার, মারাঠি তামাশায় দেখা গেল যে, জমিদারের কাছে চাষি অনেক কাকুতিমিনতি করার একটু পরেই মঞের অন্য কোণে যখন ভগবানের কাছে নালিশ জানাতে গেল তখন সেই জমিদার অভিনেতাই মঞেঞ্চর উপরে দাড়িগোঁফ লাগিয়ে ধর্মীয় তর্জন শুরু করে দিল। এমনকি মাঠ ভরতি দর্শক তা মেনেও নিল।

কিন্তু শুধু আমাদের দেশেই নয়, বিদেশেও অভিনয়ে ভঙ্গির বহুল ব্যবহার লক্ষ করা যায়। রুশ চিত্র পরিচালক আইজেন স্টাইনের লেখা পড়ে জানা যায়, জাপানি কাবুকি থিয়েটারে Perspective রচনার জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করা হয়। একজন নাইট যখন স্টেজে এগোচ্ছেন তখন দুজন শিফটার মস্ত দুর্গার ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে, এরপর নাইটের এগিয়ে যাওয়ার Perspective তৈরির জন্য নাইট সামান্য এগোলেই শিফটারদের দ্বারা দুর্গদ্বারের আকৃতি ক্রমান্বয়ে ছোটো হচ্ছে। অর্থাৎ, এইভাবে ধারের আকৃতি ছোটো করে নাইট কতদূর এসে পৌঁছেছেন তা বোঝানো হল।

এ সমস্ত দেশি-বিদেশি উদাহরণ থেকে শম্ভু মিত্র ‘‘বিভাব’-এর মতো মঞসজ্জাহীন, নাট্য-উপকরণহীন নাটক উপস্থাপনার ভাবনায় উৎসাহিত হয়েছিলেন।


4. “আর একবার এক মারাঠি তামাশায় দেখেছিলাম” মারাঠি তামাশা’ বলতে কী বোঝো? সেই তামাশায় নাট্যকার কী দেখেছিলেন?

Ans: মারাঠি তামাশা হল মহারাষ্ট্রের ঐতিহ্যবাহী লোকনাট্যের একটি বিশেষ রূপ। এই বিশেষ লোকনাট্য নৃত্যগীত সহযোগে মহারাষ্ট্রের স্থানীয় অথবা ভ্রাম্যমাণ নাট্যগোষ্ঠীর দ্বারা প্রদর্শিত হয়ে থাকে। এগুলি সাধারণত বিভিন্ন সামাজিক অসংগতি ও জীবনের বিবিধ অভিব্যক্তিকে মনোরঞ্জনকারী ভঙ্গিতে জনসমক্ষে তুলে ধরত। মহারাষ্ট্রে মূলত দু-ধরনের তামাশা অভিনীত হয়ে থাকে—‘ঢোলাকি ফাদচা’ তামাশা ও ‘সংগীত বারিচা’ তামাশা। নৃত্য-গীত-অভিনয় সহযোগে প্রদর্শিত এক পূর্ণাঙ্গ শিল্পরীতি হল ‘ঢোলাকি ফাদচা’ তামাশা। ঐতিহ্যবাহী মারাঠি তামাশার প্রাচীন ধারায় ‘নাচ্যা’ নামাঙ্কিত অংশে নৃত্যে পারদর্শী ছেলেরাই সাধারণত মেয়ের ভূমিকাতেও অবতীর্ণ হত। বর্তমানে অবশ্য মেয়েরাও তামাশায় অংশগ্রহণ করছে। এই তামাশাগুলির রচয়িতা তথা কবি নাটকগুলির সূত্রধরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।

একদা এই মারাঠা তামাশা দর্শন কালেই নাট্যকার শম্ভু মিত্র দেখেন যে, বিশালকায় সজ্জিত মঞ, সিনসিনারির প্রয়োগবাহুল্য ব্যতীতই স্বল্প সংখ্যক অভিনেতার অভিনয় সৌকর্যের দ্বারা নাটকের কথাবস্তুটি দর্শকমনে গ্রহণযোগ্যতা লাভে সমর্থ হয়েছে। নাট্যকার দেখেন অভিনীত মারাঠি তামাশার চাষি চরিত্রটি জমিদারের কাছে প্রবল কাকুতিমিনতি করেও জমিদারের অনুকূল্য লাভে ব্যর্থ হলে ব্যর্থ মনোরথে সে— ‘ চলল মন্দিরে, ভগবানের কাছে নালিশ জানাতে।” তার ভগবানের কাছে যাওয়ার পদ্ধতিটি বড়োই অভিনব, চাষি স্টেজ থেকে বেরিয়ে না গিয়েই মঞসদৃশ্য তক্তার উপরে কয়েকবার ঘুরপাক খায় ও গ্রাম অতিক্রম করার ভঙ্গি প্রদর্শন করে। এরপর সে কাল্পনিক এক মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে ভগবানের কাছে আপন মনোবেদনা নিবেদন করতে থাকে। সর্বোপরি, জমিদারের ভূমিকায় অবতীর্ণ অভিনেতাটির দর্শকসমক্ষে দাঁড়িয়েই ‘দাড়ি গোঁফ এঁটে পুরুত সেজে’ চাষিটিকে ধর্মীয় জ্ঞান প্রদান করতে থাকে এবং “মাঠ ভর্তি লোক নিঃশব্দে এসব মেনে নিয়ে দেখলে।” মারাঠি তামাশায় নাট্যকার এই বিশেষ ধরনের নাট্যপ্রদর্শনরীতি প্রত্যক্ষ করেছিলেন।


5. “এই ঘরের মধ্যে জীবনকে উপলব্ধি করা যাবে না …।”—জীবনকে উপলব্ধি করার জন্য বক্তা কী করেছিলেন? শেষে তার কীরূপ অভিজ্ঞতা হয়? 

Ans: নাট্যকার শম্ভু মিত্র শুধুমাত্র শৌখিন ইচ্ছাবশতই নাটক নির্মাণ বা নাট্যাভিনয় করতেন না। তিনি প্রকৃত অর্থে এমন শিল্প সৃষ্টি করতে চাইতেন যার দ্বারা দর্শকদের মনে বিশেষ আবেদন সৃষ্টি করা যায়। তিনি জানতেন যে, জীবনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েই সাহিত্যশৈলী পূর্ণাঙ্গ রূপে বিকশিত হতে পারে। তবে জীবনের সঙ্গে সংযুক্ত সাহিত্য সৃষ্টির জন্য জীবনকে উপলব্ধি করা সর্বাগ্রে প্রয়োজন। এই উদ্দেশ্যে তিনি প্রথমে সম্পাদকের প্রস্তাবক্রমে হাসির নাটক তৈরির জন্য হাসির খোরাক জোগাড় করতে অমর গাঙ্গুলির বাড়ি যান। সেখানে বউদি অর্থাৎ তৃপ্তি মিত্রর কথানুযায়ী দুটো লাভ সিন করেও তাঁরা হাসির সন্ধান পাননি। তাই শেষ পর্যন্ত তিনি উপলব্ধি করেন জীবনকে সম্পূর্ণ রূপে অনুভব করার জন্য চার দেয়ালের বাইরে গিয়ে প্রকৃতির মাঝে নিজেকে ও মনকে মুক্ত করতে হবে। তিনি অমর গাঙ্গুলিকে বলেন জীবন আছে—“রাস্তায়, মাঠে, ঘাটে। … সুতরাং চলো–বাইরে—হাসির খোরাক, পপুলার জিনিসের খোরাক পাবে।” অর্থাৎ, জীবনের সন্ধান লাভের জন্য বক্তা শম্ভু মিত্র চার দেয়ালের বাইরে বিশ্ববাসীর মাঝে নিজেকে উন্মুক্ত করেন, তিনি বাইরে বেরিয়ে পড়েন।

জীবনের সন্ধানে বাইরে বেরিয়ে তাঁদের মনে হয় যান্ত্রিকতা ও কৃত্রিমতার নিষ্পেষণে জীবনও যেন শুকিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে ইংরেজ শাসনের ছায়া তাঁরা লক্ষ করেন প্রতিটি জিনিসে। এমতাবস্থায় হঠাৎ-ই তাঁরা এক নৃশংস দৃশ্যের দর্শক হয়ে ওঠেন। ‘চাল চাই, কাপড় চাই’–এই ধ্বনিতে মুখরিত একটি পতাকাধারী শোভাযাত্রার গতিরোধ করার জন্য সার্জেন্টের নির্দেশক্রমে পুলিশ শোভাযাত্রার সামনে থাকা একটি ছেলে ও মেয়েকে গুলিবিদ্ধ করে। রক্তমাখা এক মর্মান্তিক দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে জীবনের ঘৃণ্যতম অভিজ্ঞতায় ভরে ওঠে দুই শিল্পীর মন।


6. “নাঃ কোথাও জীবনের খোরাক, হাসির খোরাক নেই।”—বক্তা কে? কোথাও জীবনের খোরাক, হাসির খোরাক নেই বলে বক্তা মনে করেছেন কেন? 

Ans: প্রখ্যাত নাট্যকার শম্ভু মিত্র তথা ‘বিভাব’ নাটকের অন্যতম প্রধান চরিত্র শম্ভু আলোচ্য উক্তিটির বক্তা।

সাহিত্য সমাজের দর্পণ। সাধারণত, জীবনের যাবতীয় অনুভূতিই তার নিজস্ব রূপ-রস-বর্ণ-গন্ধ সহযোগে নাটকে সংবেশিত হয় ও সেই অনুভূতিই নাটকের কুশীলবদের অভিনয়গুণে দর্শক সমক্ষে পরিবেশিত হয়। শম্ভু মিত্রের ‘বিভাব’ নাটকটিতেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যাবলি নাটকীয় ভঙ্গিতে এই নাটকে উপস্থাপিত হয়েছে। বহুরূপী নাট্যদলের নাটকের প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব সম্পর্কিত দীর্ঘ সংলাপের মধ্য দিয়ে যে নাটকের সূচনা তারই পরিসমাপ্তি এক চরম জীবনবোধের প্রকাশে। নাট্য-সম্পাদকের কথানুযায়ী হাসির নাটকের প্রধান উপাদান হাসির খোরাক জোগাড় করতে গিয়ে শম্ভু বাড়ির আবদ্ধ পরিবেশে দুটি প্রেমের দৃশ্য অভিনয় করে দেখেন। কিন্তু অপ্রাসঙ্গিক প্রেমের আবহ সৃষ্টি করেই হোক কিংবা তাতে পলিটিকাল সিগনিফিক্যান্স এনেই হোক কোনোভাবেই তাতে হাসির সন্ধান পাওয়া যায় না। তাই শেষ পর্যন্ত শম্ভু সিদ্ধান্ত নেন—“এই চার দেওয়ালের মধ্যে, এই ঘরের মধ্যে জীবনকে উপলব্ধি করা যাবে না–হাসিও পাবে না। সুতরাং চলো— বাইরে—হাসির খোরাক, পপুলার জিনিসের খোরাক পাবে।” কিন্তু প্রকৃতির মাঝেও তিনি মুক্তির সন্ধান পাননি। তিনি লক্ষ করেন, অতিযান্ত্রিকতা সেখানেও জীবনের স্পন্দনকে অব্যাহত থাকতে দেয়নি। জীবনের কাননে যে হাসির ফুল ফোটে তা নিরস হয়ে গেছে বর্তমানের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে। তাই নাট্যকার কোথাও হাসির ও জীবনের খোরাক খুঁজে পাননি।


7. ‘বিভাব’ নাটকে নাট্যরীতির যে নতুনত্ব প্রকাশ পেয়েছে তা আলোচনা করো।

Ans: বাংলা নাট্যজগতের অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং ‘বহুরুপী নাট্যগোষ্ঠীর প্রাণপুরুষ শম্ভু মিত্র রচিত ‘বিভাব’ একটি ভিন্ন স্বাদের একাঙ্কিকা। স্বয়ং শম্ভু মিত্রের ভাষায় নাটকটির জন্ম ‘দুরস্ত অভাব থেকে। বস্তুত, নাটকটি সৃষ্টির পিছনে ‘বহুরূপী’-র আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যহীনতা তো নিশ্চয়ই একটা কারণ। ‘নাটক করবার বোকামিটা’ ছাড়া ভালো স্টেজ, সিনসিনারি, আলো, ঝালর কিছুই তাদের ছিল না। তার উপরে ছিল সরকারি করের বোঝা। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই একটা ‘প্যাচ’ বের করতে হয়েছিল, যেখানে নিদেন একটা প্ল্যাটফর্ম বা ক্ষেত্র থাকলেই অভিনয় করা যাবে—সিনসিনারি, দরজা-জানলা, টেবিল-বেঞি কোনো উপকরণই লাগবে না।

এ তো গেল একটা দিক। কিন্তু এ কথা ভুললে চলবে না, নাট্য অভিনয়, নাট্য-রচনা ও পরিচালনার পাশাপাশি শম্ভু মিত্র নাটক নিয়ে বহু গবেষণা করেছেন। যার ফল হল ওয়ার্কশপধর্মী এই একাঙ্কিকা। তিনি পুরোনো বাংলা নাটক, প্রাদেশিক নাটক, এমনকি বিদেশি নাটক পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন কোনোরকম নাট্য-উপকরণ, সাজসজ্জা, জৌলুস, আলো, ঝালর ছাড়াই কেবল ভঙ্গির প্রয়োগে দর্শকের মনে রস নিষ্পত্তি ঘটানো যায়। তিনি উড়ে দেশের যাত্রা, মারাঠি লোকনাট্য, জাপানি কাবুকি থিয়েটার প্রভৃতির থেকে নির্যাস গ্রহণ করে সৃষ্টি করলেন ভঙ্গি প্রধান নাটক ‘বিভাব’। সেখানে কোনোরকম উপকরণের ব্যবহার তো রাখলেনই না, উপরন্তু নাটকের চরিত্ররাও বাস্তব জীবনের পরিচিতি নিয়েই উপস্থিত হলেন। কখনও নাটকের নায়ক-নায়িকা কখনও বাস্তব চরিত্র—উভয় সত্তায় তাঁরা অনায়াস যাতায়াত রাখলেন। এইভাবে অভিনয়ে একাধিক স্তর প্রকাশ করে চলা নিঃসন্দেহে উপভোগ্য। নাট্যকর্মী ও পরিচালক শাঁওলী মিত্রের ভাষায়—“এর উপস্থাপনায় ও অভিনয়রীতিতে ‘অ্যাবসার্ড’ নাটকের ছায়া খুব স্পষ্ট।”

সেই সঙ্গে বলতে হয় সমাজ বাস্তবতার যথাযথ প্রতিফলনের পাশাপাশি নাট্য সৃষ্টির পিছনে নাট্যকর্মীদের যে আন্তরিক নিষ্ঠা ও প্রয়াস ক্রিয়াশীল থাকে তা দর্শকের বোধের কাছে খুব সুন্দরভাবে পৌঁছে দিয়েছেন নাট্যকার। এখানেই এই অভিনব নাট্যরীতির সার্থকতা।


Google News এ আমাদের ফলো করুন


Gksolves Google News


ঘোষণা: বিনামূল্যে আমাদের দেওয়া নোটস, সাজেশান, প্রশ্ন উত্তর ইত্যাদি স্টাডি ম্যাটেরিয়াল PDF এবং ভিডিও ক্লাস ভালো লাগলে, আমাদের এই পোস্টের লিংক আপনার বন্ধুদের ফেসবুকWhatsApp এ শেয়ার করে তাদের পড়ার সুযোগ করে দিন।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.