সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ভারতবর্ষ প্রশ্ন ও উত্তর - উচ্চমাধ্যমিক বাংলা

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ভারতবর্ষ প্রশ্ন ও উত্তর: প্রতিবছর উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষায় উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সাজেশন (HS Bengali Suggestion) থেকে অনেক প্রশ্ন আসে। তাই আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সিলেবাসের সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের "ভারতবর্ষ" গল্পের সমস্ত প্রশ্নোত্তর। 

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ভারতবর্ষ প্রশ্ন ও উত্তর - উচ্চমাধ্যমিক বাংলা

এখানে উচ্চমাধ্যমিক বাংলা ‘ভারতবর্ষ’ গল্পের প্রশ্ন উত্তর যেমন বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন (MCQ), অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (SAQ), সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল। যে গুলি পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ন। নিচে ‘ভারতবর্ষ’ গল্পের MCQ, SAQ প্রশ্ন উত্তর গুলি যত্ন সহকারে পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।


ভারতবর্ষ - সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ


‘ভারতবর্ষ’ গল্পটি প্রখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘পঞ্চাশটি গল্পের সংকলন’ থেকে গৃহিত হয়েছে। আলোচ্য পোস্টে সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ভারতবর্ষ’ গল্পের গুরুত্বপূর্ণ বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন (MCQ), অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (SAQ), সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল।


Google News এ আমাদের ফলো করুন


Gksolves Google News


সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ভারতবর্ষ প্রশ্ন ও উত্তর - উচ্চমাধ্যমিক বাংলা


ভারতবর্ষ গল্পের লেখক পরিচিতি

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে ১৪ ই অক্টোবর মুর্শিদাবাদ জেলার খোশবাসপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করেন বর্ধমান জেলার গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয় থেকে। উচ্চশিক্ষা গ্রহন করেন বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইবলিশ ছদ্মনামে লেখা শুরু করেন এবং তার প্রথম গল্প কাঁচি বহরমপুরের সুপ্রভাত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। ওই বছরই দেশ পত্রিকায় তার আরো একটি কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল সেটির নাম শেষ অভিসার। সমগ্র জীবনে তিনি দেড়শটির মতো উপন্যাস এবং ৩০০ টির কাছাকাছি ছোট গল্প লিখেছেন। তার উল্লেখযোগ্য ছোটগল্প গুলি হল ভালোবাসা ও ডাউন ট্রেন, হিজল বিলের রাখালেরা, তরঙ্গিণীর চোখ, মানুষের জন্ম, রক্তের প্রত্যাশা, মাটি ইত্যাদি। এছাড়া তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস গুলি হল অলীক মানুষ, নিশি মৃগায়া, তৃণভূমি, কৃষ্ণা বাড়ি ফেরেনি, কিংবদন্তির নায়ক, প্রভৃতি। বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র গোয়েন্দা কর্নেল এর  স্রষ্টা তিনি। তিনি তার জীবনে বহু পুরস্কার এবং সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন। অলীক মানুষ উপন্যাসটির জন্য তিনি বঙ্কিম পুরস্কার পেয়েছিলেন এবং সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন ১৯৯৪ সালে, ২০১০ সালে তিনি বিদ্যাসাগর স্মৃতি পুরস্কার পান। ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে আনন্দ পুরস্কার লাভ করেছিলেন। ৮২ বছর বয়সে ২০১২ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা সেপ্টেম্বর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কথা সাহিত্যের ইতিহাসে তিনি চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।


ভারতবর্ষ গল্পের উৎস

ভারতবর্ষ গল্পটি সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের শ্রেষ্ঠ পঞ্চাশটি গল্পের সংকলন থেকে নেওয়া হয়েছে।


ভারতবর্ষ গল্পের বিষয়সংক্ষেপ

ছোট্ট কৃষিনির্ভর একটি জনপদ কে কেন্দ্র করে এই গল্পটি আবর্তিত। তখন শীতকাল, যদিও ওই শীতের মধ্যেই বেশ কয়েকদিন ধরে বৃষ্টির দাপট ছিল। গ্রামের প্রত্যেকেই ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনাই অত্যন্ত চিন্তিত। আবার অলস কর্মহীন মানুষেরা কিন্তু চায়ের দোকানে ভিড় করতে থাকলো। অদেখা শক্তি, ভগবান, আল্লাহ ইত্যাদির উপরে মানুষের মনে সংশয় দেখা দিতে থাকলো। চায়ের দোকানে বসে তারা গল্পের ছলে রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের অপেক্ষা করছিল, কেউ কেউ হতাশ হয়ে ঈশ্বর আল্লাহর নামে অনেক খারাপ কথা বলতে থাকলো।একজন যুবক আবার বলে উঠলো যে আসলে আমাদের মাথার উপরে ঈশ্বর বা আল্লাহ বলে কোন নিয়ন্ত্রকের অস্থিত্ব নেই। সে সময় সেখানে আগমন ঘটে এক থুত্থুরে কুঁজো ভিখারি বুড়ির। এক মাথা সাদা চুল, পরনে ছেঁড়া নোংরা কাপড় এবং চিটচিটে তুলোর কম্বল গায়ে জড়ানো, তার হাতে ছিল খুব ছোট্ট একটা লাঠি, পিচের রাস্তায় বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে সে চায়ের দোকানে এসে ঢুকলো। তার চেহারা ছিল খর্বাকৃতি কিন্তু মেজাজ ছিল বেজায় চড়া। প্রবল বৃষ্টিতে তার আগমনে সকলে বিস্মিত হয়েছিল এবং তার কাছে জানতে চেয়েছিল সে কোথা থেকে এসেছে। বুড়ি তখন অত্যন্ত রাগান্বিত হয়ে জবাব দেয় যে সে কথা শুনে তোমাদের কাজ কি বাছা। তার তেজ নিয়ে উপস্থিত লোকজন যখন কৌতুক করতে থাকে তখন সে আরও ঝাঁজালো ভাষায় উত্তর দিতে থাকে। বুড়ি চা খায় পয়সাও দেয়, তারপর এই দুর্যোগের মধ্যে খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে এই বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে রাস্তার বাঁক এর কাছে এক বটগাছের নিচে আশ্রয় নেয়। কয়েকদিন পরে আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটে, আকাশে সূর্যের দেখা মেলে, রোদ ওঠে এবং দেখা যায় গ্রামের বটতলায় বট গাছের খাঁজের মধ্যে সেই বুড়ি অসাড় হয়ে পড়ে আছে। তাকে মৃত মনে করা হয় এবং চৌকিদারের পরামর্শ মতো গ্রামের হিন্দুরা তাকে ফেলে আসে নদীর ধারে। আবার বিকেলেই একটা গন্ডগোল বাধে, কয়েকজন মুসলমান তাকে চ্যাংদোলা করে নদীর ধার থেকে নিয়ে চলে আসেন এবং হিন্দু মুসলমান দুই পক্ষের মধ্যে এই বুড়িকে নিয়ে টানাটানি শুরু হয়। দুপক্ষই বুড়িকে নিজেদের সম্প্রদায়ের বলে দাবি করতে থাকে এবং নিজেদের দাবি প্রমাণ করার জন্য তারা নানান রকম যুক্তি খারা করতে থাকে। কিন্তু সমস্যার সুরাহা হয় না এবং পরবর্তীতে সেই বাদানুবাদ দান্দায় পরিণত হয়। এসবের মাঝেই বুড়ির চেতনা ফেরে। সে হঠাৎ জেগে ওঠে। দুদিকেই ঠেলাঠেলি, ভিড় দেখে সে মুখ বাঁকিয়ে হাসতে থাকে। এরপর বুড়ির কাছে জানতে চাওয়া হয় সে হিন্দু নাকি মুসলমান। বুড়ি তীক্ষ্ণ ভাষায় সকলকে তাচ্ছিল্য করতে থাকে এবং হাঁটতে হাঁটতে দূরের পথে পাড়ি দেয়। ধর্মান্ধ মানুষরা দুদিকে সরে গিয়ে তাকে রাস্তা বার করে দেয়।


ভারতবর্ষ গল্পের নামকরণ

ছোট গল্পের নামকরণ অনেক সময় বিষয়ের উপরে ভিত্তি করে হয়ে থাকে, কখনো কখনো চরিত্র কেন্দ্রিক , কখনোবা ঘটনা প্রধান, আবার কখনো ব্যঞ্জনা প্রধান হয়ে ওঠে। সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ ভারত বর্ষ গল্পের নামকরণের ক্ষেত্রে ব্যঞ্জনার দিক টিকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। যদিও মূল কাহিনীতে আমরা কোথাও ভারতবর্ষের নাম পাইনা কিন্তু গল্পের মধ্যে ভারত বর্ষ এবং তার বৈচিত্র্যময় সমাজ ব্যবস্থা উঁকি দিয়েছে বারে বারে। শীতের দুর্যোগে ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনায় যখন গ্রামের সকলেই চিন্তিত। অলস কর্মহীন মানুষেরা ভিড় জমায় চায়ের দোকানে এবং অদৃষ্টের প্রতি তাদের অবিশ্বাস তাদের কথোপকথন এর মধ্যে উঠে আসে। রাঢ় বাংলার একটি গ্রামের ঘটনা হলেও আসলে এখানে সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ সমগ্র ভারতবর্ষকে চিত্রায়িত করেছেন। কারণ এই ধরনের চায়ের ঠেকে সিনেমার অভিনেতা, অভিনেত্রী, থেকে প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, পাড়ার পঞ্চায়েত সবকিছু নিয়েই আলোচনা হয়ে থাকে। ঘটনার গতিপথে আমরা দেখতে পাই একজন বৃদ্ধা হঠাৎই চলে আসে চায়ের দোকানে। সে চেহারায় খর্বাকৃতির হলেও অত্যন্ত মেজাজি। চা খায় এবং পয়সাও মেটায়। সকলের সমস্ত প্রশ্নের তীক্ষ্ণ জবাব দিতে থাকে। পরবর্তীতে তার মৃত্যুর পর গ্রামের মানুষজন হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে দুই পক্ষে ভাগ হয়ে যায়। দু'পক্ষই মৃতদেহ কে নিজেদের অধিকারের আনতে চায় এবং নিজ নিজ উপায়ে তার সৎকার করতে চায়। গোটা গ্রাম অস্ত্র হাতে দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়ে। তখনই সবাইকে অবাক করে বুড়ির মৃতদেহ হঠাৎই নড়ে ওঠে। বুড়ি উঠে দাড়ায় এবং ধর্মান্ধ মানুষদের দ্বিধা-দ্বন্ধ দেখে বিকৃত হাসি হাসতে থাকে। এ যেন ধর্মান্ধ মানুষদের প্রতি ব্যাঙ্গের উদ্রেক। তারপর কাউকে গুরুত্ব না দিয়ে রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকে সে। আসলে সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ তাকে শুধুমাত্র বুড়ি নয় এখানে ভারতআত্মা রূপে চিত্রায়িত করতে চেয়েছেন। এ যেন সম্প্রীতির এক অন্য ভারত। ধর্মান্ধদের প্রতি যার রয়েছে তীব্র ঘৃণা, যে ভারত নিজেকে হিন্দু কিংবা মুসলমান পরিচয়ে আবদ্ধ রাখতে চায় না। যথার্থ অর্থেই সে যে মানুষ। তাই ব্যঞ্জনার নিরিখে ভারতবর্ষের নামকরণটি যথার্থভাবেই সার্থক হয়েছে।


ভারতবর্ষ MCQ প্রশ্ন ও উত্তর (বহু বিকল্প ভিত্তিক)


1. “ যবন নিধনে অবতীর্ণ হও মা ! ” একথা বলেছিল 

(ক) ভট্টাচার্যমশাই 

(খ) গাঁয়ের দারােগা 

(গ) নিবারণ বাগদি 

(ঘ) গাঁয়ের পুলিশ। 

Ans. (ক) ভট্টাচার্যমশাই।


2. “ বুড়িমা ! তুমি মরনি ! ” বক্তা হলাে— 

(ক) চৌকিদার 

(খ) গাঁয়ের দারােগা 

(গ) নিবারণ বাগদি 

(ঘ) গাঁয়ের পুলিশ। 

Ans. (ক) চৌকিদার।


3. ডাকপুরুষের বচন অনুযায়ী সােমবারের পউষে বাদল কতদিন চলে ? 

(ক) সাত দিন। 

(খ) পাঁচ দিন। 

(গ) তিন দিন 

(ঘ) এক দিন। 

Ans. (ঘ) এক দিন।


4. “ তােমাদের কত্তাবাবা টাটু ” – কাদের উদ্দেশে এই কথা বলেছিল ? 

(ক) মুসলমানদের 

(খ) হিন্দুদের 

(গ) যুবকদের 

(ঘ) দেশের। 

Ans. (গ) যুবকদের।


5. “ মাথার ওপর আর কোনাে শালা নেই রে— কেউ নেই ” — কথাটি বলেছিল— 

(ক) গ্রামের কোনাে যুবক চাষি 

(খ) গ্রামের মােড়লেরা 

(গ) গ্রামের এক গণমান্য চাষি। 

(ঘ) এক ভবঘুরে

Ans. (ক) গ্রামের কোনাে যুবক চাষি।


6. থুথ্থুরে ভিখিরি বুড়ির গায়ে জড়ানো—

(ক) তুলোর কম্বল 

(খ) ছেড়া কাপড় 

(গ) নোংরা চাদর 

(ঘ) দামি শাল

Ans. (ক) তুলোর কম্বল


7. “জোর কথা কাটাকাটি চলে” – চায়ের দোকানে এর ফলে কী হয়?

(ক) চা বিক্রি বাড়ে 

(খ) ঝগড়া হয় 

(গ) সময় কাটে 

(ঘ) বিরক্তি লাগে

Ans. (ক) চা বিক্রি বাড়ে


8. “হঠাৎ বিকেলে এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখা গেল।” দৃশ্যটি হলো-

(ক) হিন্দুরা বুড়ির মৃতদেহ নিয়ে আসছে 

(খ) হেঁটে হেঁটে বুড়ি এদিকেই আসছে 

(গ) বুড়ি মারা গেছে বলে সকলে কাদছে 

(ঘ) মুসলমান পাড়ার লোকেরা বুড়ির মৃতদেহ নিয়ে আসছে

Ans. (ঘ) মুসলমান পাড়ার লোকেরা বুড়ির মৃতদেহ নিয়ে আসছে


9. ডাকপুরুষের বচন অনুযায়ী সোমবারের পউষে বাদল কতদিন চলে ?

(ক) সাত দিন 

(খ) পাঁচ দিন 

(গ) তিন দিন 

(ঘ) এক দিন

Ans. (ঘ) এক দিন


10. বুড়িকে নদীতে ফেলে দিতে কে বলেছিল?

(ক) চৌকিদার 

(খ) জগা 

(গ) ভটচাযমশাই 

(ঘ) মোল্লা

Ans. (ক) চৌকিদার


11. “চোখের মাথা খেয়েছিস মিনষেরা”- কার উক্তি ?

(ক)মোল্লার 

(খ)ভট্টাচার্যমশায়ের 

(গ) বুড়ির 

(ঘ) নাপিতের

Ans. (গ) বুড়ির


12. “তোমাদের কত্তাবাবা টাট্ট” – কাদের উদ্দেশে এই কথা বলেছিল ?

(ক) মুসলমানদের

(খ) হিন্দুদের 

(গ) যুবকদের 

(ঘ) দেশের

Ans. (গ) যুবকদের


13. “মাথার ওপর আর কোনো শালা নেই রে— কেউ নেই”- কথাটি বলেছিল

(ক) গ্রামের কোনো যুবক চাষি 

(খ) গ্রামের মোড়লেরা 

(গ) এক ভবঘুরে 

(ঘ) গ্রামের এক গণমান্য চাষি

Ans. (ক) গ্রামের কোনো যুবক চাষি


14. “আমি স্বকর্ণে শুনেছি, বুড়ি লা ইলাহা বলেছে।” কথাটি বলেছিল–

(ক) করিম ফরাজি 

(খ) মোল্লা সাহেব 

(গ) ফজলু শেখ 

(ঘ) মৌলবি সাহেব

Ans. (গ) ফজলু শেখ


15. “যবন নিধনে অবতীর্ণ হও মা!” একথা বলেছিল—

(ক) ভট্টাচার্যৰ্মশাই 

(খ) গাঁয়ের দারোগা 

(গ) নিবারণ বাগদি 

(ঘ) গাঁয়ের পুলিশ

Ans. (ক) ভট্টাচার্যৰ্মশাই


16. “বুড়িমা! তুমি মরনি!” বক্তা হলো—

(ক) চৌকিদার 

(খ) গাঁয়ের দারোগা 

(গ) নিবারণ বাগদি 

(ঘ) গাঁয়ের পুলিশ

Ans. (ক) চৌকিদার


17. এ বারের বাদলা কী বারে লেগেছিল ?

(ক) সোমবারে 

(খ) মঙ্গলবারে 

(গ) বুধবারে 

(ঘ) শনিবারে

Ans. (খ) মঙ্গলবারে


18. “পিচের সড়ক বাঁক নিয়েছে যেখানে, সেখানেই গড়ে উঠেছে”–

(ক) একটি মিষ্টির দোকান 

(গ) একটি শনিমন্দির 

(ঘ) একটি চায়ের দোকান

Ans. (খ) একটি ছোট্ট বাজার


19. “তোর শতগুষ্টি মরুক”- উক্তিটি কার?

(ক) জগার 

(খ) মোল্লার 

(গ) নকড়ির 

(ঘ) বুড়ির

Ans. (ঘ) বুড়ির


20. “এক সময় দাগি ডাকাত ছিল”– কে একসময় দাগি ডাকাত ছিল?

(ক) ফজলু শেখ 

(খ) নিবারণ বাগদি 

(গ) করিম ফরাজি 

(ঘ) নকড়ি নাপিত

Ans. (খ) নিবারণ বাগদি


21. বুড়িকে ‘হরিবোল বলতে স্পষ্ট শুনেছে–

(ক) নিবারণ বাগদি 

(খ) নকড়ি নাপিত 

(গ) ভটচামশাই 

(ঘ) ফজলু শেখ

Ans. (খ) নকড়ি নাপিত


22. “ আমি স্বকর্ণে শুনেছি , বুড়ি লা ইলাহা বলেছে। ” কথাটি বলেছিল-

(ক) করিম ফরাজি 

(খ) মােল্লা সাহেব 

(গ) ফজলু শেখ 

(ঘ) মৌলবি সাহেব। 

Ans. (গ) ফজলু শেখ।


23. এ বারের বাদলা কী বারে লেগেছিল ? 

(ক) সােমবারে 

(খ) মঙ্গলবারে 

(গ) বুধবারে 

(ঘ) শনিবারে। 

Ans. (খ) মঙ্গলবারে।


24. “ পিচের সড়ক বাঁক নিয়েছে যেখানে , সেখানেই গড়ে উঠেছে ” 

(ক) একটি মিষ্টির দোকান 

(খ) একটি ছােট্ট বাজার 

(গ) একটি শনিমন্দির 

(ঘ) একটি চায়ের দোকান। 

Ans. (খ) একটি ছােট্ট বাজার।


25. তাের শতগুষ্টি মরুক ” – উক্তিটি কার ? 

(ক) জগার 

(খ) মােল্লার 

(গ) নকড়ির 

(ঘ) বুড়ির। 

Ans. (ঘ) বুড়ির।


26. থুথুরে ভিখিরি বুড়ির গায়ে জড়ানাে— 

(ক) তুলাের কম্বল 

(খ) ছেড়া কাপড় 

(গ) নােংরা চাদর 

(ঘ) দামি শাল। 

Ans. (ক) তুলাের কম্বল।


27. বুড়িকে নদীতে ফেলে দিতে কে বলেছিল ?  

(ক) চৌকিদার 

(খ) জগা 

(গ) ভটচামশাই

(ঘ) মােল্লা। 

Ans. (ক) চৌকিদার।


28. “ চোখের মাথা খেয়েছিস মিনষেরা ” – কার উক্তি ? 

(ক) মােল্লার 

(খ) ভটচামশায়ের 

(গ) বুড়ির 

(ঘ) নাপিতের। 

Ans. (গ) বুড়ির।


29. “ জোর কথা কাটাকাটি চলে ”। – চায়ের দোকানে এর ফলে কী হয় ? 

(ক) চা বিক্রি বাড়ে 

(খ) ঝগড়া হয় 

(গ) সময় কাটে 

(ঘ) বিরক্তি লাগে। 

Ans. (ক) চা বিক্রি বাড়ে।


30. “ হঠাৎ বিকেলে এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখা গেল। ” দৃশ্যটি হলাে- 

(ক) হিন্দুরা বুড়ির মৃতদেহ নিয়ে আসছে। 

(খ) হেঁটে হেঁটে বুড়ি এদিকেই আসছে। 

(গ) বুড়ি মারা গেছে বলে সকলে কাদছে। 

(ঘ) মুসলমান পাড়ার লােকেরা বুড়ির মৃতদেহ নিয়ে আসছে।

Ans. (ঘ) মুসলমান পাড়ার লােকেরা বুড়ির মৃতদেহ নিয়ে আসছে।


ভারতবর্ষ SAQ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর


1. ’ডাওর’ কাকে বলে?

Ans: শীতকালের বৃষ্টিকে রাঢ়বাংলার চাষাভুষোরা ‘ডাওর’ বলে |


2. ‘ সেটাই সবাইকে অবাক করেছিল ” —কোন ঘটনা সবাইকে অবাক করেছিল ?


Ans: থুরথুরে কুঁজো ভিখিরি বুড়ি ওই দুর্যোগে কীভাবে বেঁচেবর্তে হেঁটে চায়ের দোকানে আসতে পারে , সেটাই সবাইকে অবাক করেছিল। 


3. “সেই সময় এল এক বুড়ি।” –বুড়ির অবয়ব কেমন ছিল?

Ans: বুড়ি থুথুরে কুঁজো, একমাথা সাদা চুল, খর্বুটে, পরনে ছেঁড়া কাপড়, গায়ে জড়ানো চিটচিটে তুলোর কম্বল |


4. নাপিত নকড়ি বুড়িকে কী বলতে শুনেছিল ?

Ans: নাপিত নকড়ি বুড়িকে হরিবােল হরিবােল বলতে শুনেছিল। 


5. চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে দিতে গ্রামবাসীরা কীসের প্রতীক্ষা করছিল ?

Ans: চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে দিতে গ্রামবাসীরা রােদ ঝলমল একটা দিনের প্রতীক্ষা করছিল। 


6. ’ফাঁপি’ কী?

Ans: শীতকালে বৃষ্টির সঙ্গে জোরালো বাতাস বইলে তাকে ‘ফাপি’ বলে |


7. “ বােঝা গেল , বুড়ির এ অভিজ্ঞতা প্রচুর আছে। ” বুড়ির কী অভিজ্ঞতা ছিল ?

Ans: গাছের মােটা শিকড়ে বসে শিকড়ের পিছনে গাছের খোঁদলে পিঠ ঠেকিয়ে পা ছড়িয়ে বসার অভিজ্ঞতা বুড়ির আছে। 


8. “ তর্কাতর্কি , উত্তেজনা হল্লা চলতে থাকল। ” কী বিষয়ে , কাদের মধ্যে তর্কাতর্কি , উত্তেজনা ও হল্লা চলছিল ?

Ans: সমাজসচেতন লেখক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ রচিত ‘ ভারতবর্ষ ‘ গল্পে একটি চেতনাহীন বৃদ্ধা হিন্দু না মুসলমান এই বিষয়কে কেন্দ্র করে হিন্দু – মুসলমানদের মধ্যে। তর্কাতর্কি , উত্তেজনা , হল্লা চলছিল। 


9. “ হঠাৎ বিকেলে এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখা গেল ” অদ্ভুত দৃশ্যটি কী ?

Ans: সকালে যে বুড়ির মৃতদেহ গ্রামের যুবকরা নদীর তীরে ফেলে দিয়ে এসেছিল , বিকেলে মাঠ পেরিয়ে মুসলমানরা সেই দেহকেই চ্যাংদোলায় বহন করে আনছে।


10. “সবার হাতে মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র। – কী কারণে সবাই অস্ত্রশস্ত্র নিয়েছিল?

Ans: বুড়ি হিন্দু না মুসলমান– এই বিতর্কে হিন্দু আর মুসলমানেরা জড়িয়ে পড়েছিল। সেই বিতর্ক চরমে পৌঁছলে পরস্পরকে আক্রমণের জন্য তারা অস্ত্রশস্ত্র নিয়েছিল।


11. “চৌকিদার হাঁ করে দেখছে।” – চৌকিদার কী দেখছে?

Ans: চৌকিদার দেখছে বুড়ি নড়তে নড়তে উঠে বসার চেষ্টা করছে আর দু-দিকের সশস্ত্র জনতা তার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।


12. “একদা সে ছিল পেশাদার লাঠিয়াল। এখানে কার কথা বলা হয়েছে?

Ans: এখানে ‘ভারতবর্ষ’ গল্পের করিম ফরাজির কথা বলা হয়েছে।


13. “বৃষ্টিতে তা হলো ধারালো” —কী ধারালো হল?

Ans: রাঢ় বাংলার জাঁকালো শীতের মধ্যে বৃষ্টি হলে গাঁত খুব ধারালো হয়।


14. “আমি স্বকর্ণে শুনেছি।” –কে, কী শুনেছিল?

Ans: ‘ভারতবর্ষ’ গল্পে ফজলু সেখ বুড়িকে ‘লাইলাহা ইল্লাল্লা’ বলতেশুনেছে।


15. “তার সপক্ষে অনেক প্রমাণ জুটে গেল।”—কার সপক্ষে কী প্রমাণ জুটে গেল?

Ans: গাঁয়ের ভটচাজমশাই বুড়িকে শ্রীহরি বলতে শুনেছে। এই কথার সমর্থন করে নকড়ি নাপিত বলল সে বুড়িকে ‘হরিবোল’ বলতে শুনেছে, নিবারণও তার পক্ষ নিল। এইভাবে অনেক প্রমাণ জুটে গেল।


16. “বৃষ্টির সঙ্গে বাতাস জোরালো হলে বলা হয় কী?

Ans: বৃষ্টির সঙ্গে বাতাস জোরালো হলে তাকে ফাপি বলা হয়।


17. পউষে বাদলা সম্পর্কে গ্রামের ‘ডাকপুরুষের’ পুরনো ‘বিচন’টি কী ?

Ans: পউষে বাদলা সম্পর্কে ‘ডাকপুরুষ’-এর পুরনো বচন হলো- শনিতে সাত, মঙ্গলে পাঁচ, বুধে তিন— বাকি সব দিন এক দিন বৃষ্টি হবে।


18. “নিবারণ বাগদি রাগী লোক”– নিবারণ বাগদি আগে কী করত?

Ans: নিবারণ বাগদি একসময় দাগি ডাকাত ছিল, ডাকাতি করত।


19. “তাই লোকের মেজাজ গেল বিগড়ে। কী কারণে লোকের মেজাজ বিগড়ে গেল?

Ans: ’ভারতবর্ষ’ গল্পের কাহিনি অনুসারে শীতকালে বৃষ্টির সঙ্গে জোরালো বাতাসের এক দুর্যোগ সৃষ্টি হয়েছিল। তখন মাঠ ভরতি ধানের ক্ষতির আশঙ্কায় লোকের মেজাজ বিগড়ে গেল।


20. ’ভারতবর্ষ’ গল্পে যে বাদলার কথা আছে, তা কোন্ দিন লেগেছিল?

Ans: ’ভারতবর্ষ’ গল্পে যে বাদলার কথা আছে তা মঙ্গলবারে লেগেছিল।


21. “বুড়ি খেপে গেল” –কোন্ কথা শুনে বুড়ি খেপে গিয়েছিল?

Ans: চায়ের দোকানের ছেলেরা বুড়িকে বলেছিল যে, ওই বর্ষায় তেজি টাট্টুর মতো বেড়িয়ে পড়েছে | ওই কথা শুনেই বুড়ি খেপে গিয়েছিল |


22. মোল্লাসাহের কী জন্য শহরে গিয়েছিলেন?

Ans: সেদিন মামলার দিন ছিল বলে মোল্লাসাহেব শহরে গিয়েছিলেন।


23. “আরবি মন্ত্র পড়ছে ওরা।”— কারা আরবি মন্ত্র পড়ছিল?

Ans: মুসলমান পাড়ার লোকেরা বুড়ির মৃতদেহ নদীর চড়া থেকে তুলে আনার সময় আরবি মন্ত্র পড়ছিল।


24. “তাই ধারের অঙ্ক বেড়ে চলে।”— কী কারণে ধারের অঙ্ক বেড়ে চলে?

Ans: ধানের মরশুম; তাই আজ না হোক কাল পয়সা পাবেই—এই আশায় চা-ওয়ালার ধারের অঙ্ক বেড়েই চলে।


25. “নারায়ে তকবির–আল্লাহু আকবর।”— এ কথার অর্থ কী?

Ans: উদ্ধৃত কথাটির অর্থ হল উচ্চকণ্ঠে বলো আল্লাই সর্বশ্রেষ্ঠ।


26. ‘লাইলাহা ইল্লাল্ল’ কথার অর্থ কী?

Ans: এই কথাটির অর্থ হল–আল্লা ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই।


27. “সবাই দিগন্তে চোখ রাখল।” – কী কারণে সবাই দিগন্তে চোখ রেখেছিল?

Ans: বুড়ির মৃতদেহ নদীর চড়ায় ফেলে দিয়ে এসে সবাই ভেবেছিল ঝাঁকেঝাঁকে শকুন নামবে। তাই তারা দিগন্তে চোখ রেখেছিল |


28. “নির্ঘাত মরবে বুড়িটা।” –এমন মন্তব্যের কারণ কী?

Ans: শীতের ভয়ংকর ঝড়বাদলের মধ্যে উদ্দিষ্ট বুড়ি একা একাই রাস্তায় রাস্তায় বেরিয়েছিল। এই কারণেই তার সম্পর্কে আলোচ্য মন্তব্যটি করা হয়েছে।


29. “বিজ্ঞ চৌকিদারের পরামর্শ মানা হল।” –চৌকিদারের পরামর্শ মেনে বুড়ির শবদেহকে কী করা হল?

Ans: বিজ্ঞ চৌকিদার মৃত বুড়িকে দু-মাইল দূরে নদীতে ফেলে দিয়ে আসতে পরামর্শ দিয়েছিল।


30. “তা কি হয় আমরা বেঁচে থাকতে?” – কী হওয়ার কথা বলা হয়েছে?

Ans: মৃত বুড়িকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা নদীর চড়ায় ফেলে দিয়ে এসেছিল। গাঁয়ের মোল্লা বুড়িকে মুসলমান ভেঙে নিয়ে উক্ত ঘটনাটি মেনে নিতে পারেন নি।


31. “শনিতে সাত, মঙ্গলে পাঁচ, বুধে তিন–বাকি সব দিন-দিন।” —পউষে বাদলা সম্পর্কে প্রচলিত গ্রামের ‘ডাকপুরুষের’ পুরোনো ‘বচন’-টি ব্যাখ্যা করো।

Ans: ডাকপুরুষের বচনটির অর্থ হল—শনিতে বাদলা লাগলে সাত দিন থাকবে, মঙ্গলে লাগলে পাঁচ দিন ও বুধে তিন দিন| বাকি দিনে, বাদলা লাগলে দিনের দিনেই বন্ধ হয়ে যাবে।


32. “উঁকি মেরে সব দেখে শুনে বললেন—অসম্ভব।” – কে, কী দেখে অসম্ভব বলেছিল?

Ans: ‘ভারতবর্ষ’ গল্পে বর্ণিত গ্রামের মোল্লাসাহেব মৃত বুড়িকে উঁকি মেরে দেখেন এবং বলেন যে, বুড়ি কখনই মুসলমান নয়।


33. “মুখটা বিকৃত হয়ে গেল।” – কী কারণে, কার মুখ বিকৃত হয়ে গিয়েছিল?

Ans: ‘ভারতবর্ষ’ গল্পের মৃত বুড়ি চ্যাঙদোলা থেকে উঠে বসে দু-দিকের বিবদমান জনতাকে দেখল। তাদের সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধিকে ব্যঙ্গ করতেই বুড়ির মুখটা বিকৃত হয়ে গিয়েছিল|


34. “মাথায় টুপিও পরেছে কেউ কেউ।”— কখন, কাদের মাথায় টুপি দেখা গিয়েছিল?

Ans: মৃত বুড়িকে মুসলমান ভেবে ওই সম্প্রদায়ের কিছু লোক তার মৃত দেহকে নদীর তীর থেকে ফিরিয়ে আনছিল। তখনই তাদের কারো কারো মাথায় টুপি দেখা গিয়েছিল।


35. “নিবারণের চ্যাঁচানি বরদাস্ত করবে কেন সে?”—এখানে যার কথা বলা হয়েছে, তার সম্পর্কে এমন উক্তির কারণ কী?          

Ans: করিম ফরাজি একসময় ছিল পেশাদার লাঠিয়াল। সেই কারণেই নিবারণের চেঁচানি সে বরদাস্ত করবে না বলে মনে করা হয়েছে।


ভারতবর্ষ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর


প্রশ্ন. কখন বির্মষ সভ্যতার মুখ চোখে পরে?

উত্তরঃ যখন কাঁচা রাস্তা ধরে বিদ্যুৎহীন গ্রামের দিকে সবুজ ঝোপের ফাঁকে এগিয়ে আসে আমেদাবাদের কারখানায় তৈরি পোশাক পরিহিত কোন যুবক-যুবতি, তখনই বিমর্ষ মুখ চোখে ধরা পরে।


প্রশ্ন. ‘বাজারে বিদ্যুৎ আছে।’ —বাজারে কী কী আছে তার বর্ননা দাও?

উত্তরঃ বাজারে রয়েছে তিনটি চায়ের দোকান।এছাড়াও তিনটি পোশাকের, দুটি সন্দেশের, একটি মনোহারি ও দুটি মুদির দোকান রয়েছে। রয়েছে একটা আড়ত, একটা হাস্কিং মেশিন এবং পিছনে রয়েছে একটি ইটভাটা। 


প্রশ্ন. ”তারপর সব ফাঁকা।” —কখন সব ফাঁকা হয়ে যায়?

উত্তরঃ বাজারটিতে চারপাশের গ্রাম থেকে লোকেরা আসে। সেখানে রাত নটার পর  সব ফাঁকা হয়ে যায়। 


প্রশ্ন. ফাঁপি কাকে বলে?

উত্তরঃ রাঢ়বাংলার জাঁকালো শীত যখন বৃষ্টিতে ধারালো হয় তখন ভদ্রলোকে তাকে বলে “পউষে বাদলা”, ছোটলোকে তাকে বলে ‘ডাওর’ আর বৃষ্টির সঙ্গে জোরে বাতাস দিলে তাকে বলে ফাঁপি।


প্রশ্ন.  ‘তখন যা খুশি করা যায়’ —এখানে যা খুশি বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তরঃ আল্লা-ভগবান মাথার উপর না থাকলে ভরা শীতের অকাল দুর্যোগে সভ্যতার ছোট উনুনের পাশে উপস্থিত হয়ে প্রসঙ্গহীন তর্ক ও মারামারি করা যায়। 


প্রশ্ন. ‘এইটুকু যা সুখ’ —কোন সুখের কথা বলা হয়েছে?

উত্তরঃ প্রচন্ড শীতে অকালবর্ষণ হলে গ্রামের লোকেরা এসে একটু হাত-পা সেঁকে সুখ পায়, তারই কথা বলা হয়েছে। 


প্রশ্ন. বুড়ির মুখটা কেমন ছিল?

উত্তরঃ বুড়ির মুখটা ছিল ক্ষয়িত, খর্বুটে এবং তার মুখে প্রকট ছিল সুদীর্ঘ আয়ুর চিহ্ন। 


প্রশ্ন. ‘সেটাই সবাইকে অবাক করেছিল’ — সবাই অবাক হয়েছিল কেন?

উত্তরঃ দুর্যোগের মধ্যে বুড়ি কিভাবে বেঁচে আছে এবং হেঁটে দোকানে এসেছে, তা ভেবেই দোকানের সবাই অবাক হয়ে যায়। 


প্রশ্ন. ‘আর, সবাই আবিষ্কার করল’ —সবাই কী আবিষ্কার করল?

উত্তরঃ পউষে বাদলা, যেদিন ছাড়ল, সেদিন সবাই বটতলায় গিয়ে আবিষ্কার করল যে, বটতলায় গুঁড়ির খোঁদলে পিঠ রেখে বুড়ি চিৎ হয়ে নিঃসাড় ভাবে পরে আছে। 


প্রশ্ন. বুড়ির কবর দেওয়ার ব্যবস্থা কে করেছিলেন?

উত্তরঃ গ্রামের মোল্লাসাহেবই বুড়িকে কবর দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। 



ভারতবর্ষ রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর


1. “সেখানেই গড়ে উঠেছে একটা ছোট্ট বাজার।”—বাজারটি কোথায় অবস্থিত ছিল? এই বাজারটির বর্ণনা দাও। 

Ans. বাজারটির অবস্থান সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ভারতবর্ষ’ গল্পটি গড়ে উঠেছে রাঢ়বাংলার একটি ছোট্ট গ্রাম্য বাজারকে কেন্দ্র করে। পিচের সড়ক আদ্যিকালের এক বটগাছের পাশে যেখানে বাঁক নিয়েছে, সেখানেই গড়ে উঠেছিল বাজারটি।

বাজারটির বর্ণনা: বাজারটিতে সবমিলিয়ে ছিল তিনটি চায়ের দোকান, দুটো সন্দেশের দোকান, তিনটি পোশাকের দোকান, একটা মনোহারির দোকান এবং দুটি মুদিখানা। এ ছাড়াও একটি আড়ত এবং একটি হাস্কিং মেশিনেরও দোকান ছিল সেখানে। বাজারটির উত্তরে ছিল বিরাট একটি মাঠ এবং পেছনে ছিল বাঁশবন। চারপাশের গ্রামের মানুষ প্রতিদিন এখানেই কেনাকাটা করতে আসত।

পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলিতে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকলেও বাজারে বিদ্যুৎ ছিল। সকাল থেকে শুরু করে রাত ন-টা পর্যন্ত এই বাজার খোলা থাকত। চারপাশের গ্রামের মানুষদের কাছে এটা তাই একটা আড্ডার জায়গাও ছিল। ‘সভ্যতার ছোট উনোনের পাশে হাত-পা সেঁকে নিতে’ তারা প্রায়শই বাজারে আসত, বিশেষত সন্ধ্যায়, যখন গ্রামগুলি প্রায় অন্ধকার থাকত। রাত ন-ন্টায় বাজার ফাঁকা হয়ে গেলে জনহীন বাজারের বৈদ্যুতিক আলোয় দু-একটা নেড়িকুত্তাকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যেত। একটা-দুটো ট্রাক কখনো-সখনো রাস্তা দিয়ে শহরের দিকে চলে যেত। রাতে নিস্তব্ধ বাজারের পাশের বটগাছ থেকে পাচার ডাক শোনা যেত।


2. “সেই সময় এল এক বুড়ি।”—লেখক বুড়ির সম্পর্কে যে বর্ণনা দিয়েছেন তা নিজের ভাষায় লেখো।

Ans.  

বুড়ির বর্ণনা:

কথামুখ: সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ এর ‘ভারতবর্ষ’ গল্পে আমরা এক থুথুরে বুড়ির কথা জানতে পারি। এক বৃষ্টিভেজা শীতের দিনে গ্রামের কর্মহীন মানুষেরা চায়ের দোকানে অলস সময় কাটাচ্ছিল আর নিজেদের মধ্যে নানারকম তর্কবিতর্কে মেতে উঠেছিল। সেই সময় সেখানে আগমন ঘটে থুথুড়ে কুঁজো এক ভিখিরি বুড়ির।

চেহারার বর্ণনা: লেখকের কথায় তার ‘রাক্ষুসী চেহারা’। একমাথা সাদা চুল, পরনে একটা ছেঁড়া নোংরা কাপড়, গায়ে জড়ানো চিটচিটে তুলোর কম্বল, আর হাতে তার একটা বেঁটে লাঠি। পিচের রাস্তায় বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে একই তালে অবিচলিত ভঙ্গিতে হেঁটে সে চায়ের দোকানে এসে ঢুকল। তার ক্ষয়া ও খর্বাকৃতি চেহারা এবং মুখে “সুদীর্ঘ আয়ুর চিহ্ন প্রকট।” চেহারার থেকেও বিস্ময়কর ছিল তার চড়া মেজাজ।

বুড়ির স্বাধীনচেতা স্বভাব: প্রবল বৃষ্টিতে তার আগমনে বিস্মিত মানুষজন জানতে চাইল যে সে কোথা থেকে এসেছে। বুড়ি তখন রাগত ভঙ্গিতে জবাব দেয়—“সে কথায় তোমাদের কাজ কী বাছারা?” তার তেজ নিয়ে উপস্থিত মানুষেরা কিছু কৌতুক করলে বৃদ্ধা আরও ঝাঁজালো উত্তর দিয়ে বলে—“তোমাদের কত্তাবাবা টাট্রু।” চায়ের দাম মিটিয়ে বৃদ্ধা যখন আবার রাস্তায় নেমে যায়, তখন তারা তার মৃত্যুর আশঙ্কা প্রকাশ করলে বৃদ্ধার উত্তর ছিল “তোরা মর্, তোদের শতগুষ্টি মরুক।” গল্প শেষে যখন তার তথাকথিত মৃতদেহের অধিকার নিয়ে হিন্দু-মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মানুষেরা সংঘাতের মুখোমুখি তখন তার নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে বৃদ্ধা বলেছে—“আমি কী তা দেখতে পাচ্ছিস নে? চোখ গেলে দোবো” 

ইতিকথা: নিজস্ব মেজাজে বৃদ্ধা যেন হয়ে উঠেছে ধর্মান্ধতার এক প্রবল প্রতিবাদ।


3. “তোরা মর্, তোদের শতগুষ্টি মরুক।”—কে মন্তব্যটি করেছে? মন্তব্যটির প্রেক্ষাপট আলোচনা করো।

Ans. বক্তা: সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ভারতবর্ষ’ গল্পে বৃষ্টি বিঘ্নিত শীতের দিনে চায়ের দোকানে আগন্তুক বৃদ্ধাটি উল্লিখিত মন্তব্যটি করেছেন।

প্রেক্ষাপট: প্রবল বৃষ্টিতে গ্রামের মানুষ যখন কর্মহীন হয়ে চায়ের দোকানে আড্ডারত, সেই সময়েই সেখানে আগমন ঘটে বয়সের ভারে জীর্ণ বৃদ্ধার, যিনি প্রবল বৃষ্টিতেও চলাফেরায় সাবলীল। চায়ের দোকানে চা পান করে তিনি উপস্থিত সকলের মুখের দিকে তাকান, কিন্তু নিজে কিছু বলেন না। তখন কৌতূহলী মানুষদের মধ্যে থেকে কেউ একজন জানতে চান যে কোথা থেকে তার আগমন ঘটছে। মেজাজি বৃদ্ধা রাগত ভঙ্গিতে পালটা প্রশ্ন করেন—“সে কথায় তোমাদের কাজ কী বাছারা?” উপস্থিত মানুষেরা সেই তেজ দেখে হেসে ওঠে এবং তির্যক মন্তব্য করে—“এই বাদলায় তেজি টাট্টুর মতন বেরিয়ে পড়েছে।” বৃদ্ধাও পালটা প্রতিক্রিয়া দেন—“তোমাদের কাবাবা টাট্টু।” উপস্থিত জনতাকে তিনি ‘অকথাকুকথা’ বলতে নিষেধও করেন। শেষপর্যন্ত বৃদ্ধা কম্বলের ভিতর থেকে একটি ন্যাকড়ায় বাঁধা পয়সা খুলে চায়ের দাম মিটিয়ে আবার রাস্তায় নেমে যায়। যা দেখে সকলে আশঙ্কা প্রকাশ করে যে বৃদ্ধার নিশ্চিত মৃত্যু হবে। আর তা শুনতে পেয়েই বৃদ্ধা ঘুরে দাঁড়ায় এবং বলে— “তোরা মর্, তোদের শতগুষ্টি মরুক।”


4. “ কতক্ষণ সে এই মারমুখী জনতাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারত কে জানে ? ” — ‘ সে ’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে ? জনতা মারমুখী হয়ে উঠেছিল কেন ?

Ans. ‘ সে ’ বলতে এখানে বিপন্ন আইনরক্ষক নীল উর্দিপরা চৌকিদারকে বােঝানাে হয়েছে। 

মৃত ভেবে বৃদ্ধার ধর্ম – পরিচয়ের প্রশ্নে হিন্দু ও মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মানুষ বিবদমান হয়ে উঠেছিল। উভয় ধর্মের বেশ কিছু মানুষ বৃদ্ধার ধর্ম – পরিচয়ের প্রমাণ দিতে শুরু করলেন। মােল্লাজি , ফজলু সেখ , করিম ফরাজি প্রমাণ করতে শুরু করল বৃদ্ধা মুসলমান। আবার ভট্টচামশাই , নিবারণ বাগদি , নকড়ি নাপিত প্রমাণ দিল বৃদ্ধা হিন্দু ধর্মাবলম্বী। ধর্ম পরিচয়ের প্রশ্নে বচসা বাড়তে লাগল , তর্কাতর্কি – উত্তেজনা – হল্লা চলতে থাকল। দু’পক্ষের মানুষেরাই মৃতদেহের উপর দাবি জানিয়ে বাঁশের চ্যাংদোলাটা নিয়ে টানাটানি শুরু করে দেয়। প্রচণ্ড উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে , দোকানের ঝাপ বন্ধ হতে থাকে। তারপরেই দেখা যায় গ্রাম থেকে অনেক লােক দৌড়ে আসছে। সবার হাতেই মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র। বৃদ্ধার শবদেহের দুপাশে স্পষ্ট দুটো জনতা ’ – কে দণ্ডায়মান দেখা যায়। 

এই পরিস্থিতিতে অগ্নিতে ঘৃতাহুতির মতাে কাজ করে মােল্লাসায়েব এবং ভচামশাইয়ের ইন্ধন। এরই ফলশ্রুতিতে ধুন্ধুমার গর্জন – প্রতিগর্জন শােনা গেল এবং জনতা মারমুখী হয়ে উঠল। উভয় পক্ষই বৃদ্ধার ধর্মপরিচয়ের প্রশ্নে নিজ নিজ মত প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় রত হলাে। সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ প্রস্তুতির পটভূমিকাকেই মারমুখী জনতা ‘ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। 


5. “শেষ রোদের আলোয় সে দূরের দিকে ক্রমশ আবছা হয়ে গেল।”— কার কথা বলা হয়েছে? সে ক্রমশ আবছা হয়ে গেল কেন? 

Ans. উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: বাংলা সাহিত্য জগতের একজন অন্যতম সাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ভারতবর্ষ’ গল্পে শীতের দিনে ‘ফাপি’র প্রতিকূল আবহাওয়ায় গ্রামে চলে আসা বৃদ্ধা–যার মৃতদেহকে ঘিরে হিন্দু এবং মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি হয়েছিল—সেই বৃদ্ধার কথাই এখানে বলা হয়েছে।

উদ্দিষ্ট ব্যক্তির আবছা হয়ে যাওয়ার কারণ: গ্রামের মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষেরা নদীর চড়ায় ফেলে আসা বৃদ্ধার মৃতদেহকে গ্রামে ফিরিে আনে এবং তাকে মুসলমান দাবি করে কবরস্থ করার উদ্যোগ নেয়। এই নিয়ে হিন্দু এবং মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে প্রত্যক্ষ সংঘর্ষের উপক্রম হয়। মোল্লাসাহেবের নেতৃত্বে একপক্ষ থেকে চিৎকার ওঠে “আল্লাহ্ আকবর”, অন্যপক্ষ থেকে ভটচামশাইয়ের নেতৃত্বে গর্জন শোনা যায়—“জয় মা কালী।” এই সময়েই দেখা যায় এক অদ্ভুত দৃশ্য। বুড়ির মৃতদেহটি নড়ছে এবং আস্তে আস্তে তা উঠে বসার চেষ্টা করছে। বুড়ি উঠে দাঁড়ায়, ভিড়কে দেখে এবং বিকৃত মুখে হেসে ওঠে। তারপর ধীরে ধীরে রাস্তা ধরে সে এগিয়ে যায়। যুযুধান মানুষেরা সরে গিয়ে তাকে পথ করে দেয়। দূরের দিকে ক্রমশ অস্পষ্ট হয়ে যাওয়া বৃদ্ধা যেন ভারতবর্ষের অন্তরাত্মার প্রতীক হয়ে ওঠে, যেখানে বিদ্বেষ বা উগ্রতার কোনো জায়গা নেই।


6. ‘ভারতবর্ষ’ গল্পে বুড়ির দীর্ঘনিদ্রাভঙ্গ কীভাবে দুই সম্প্রদায়ের মারমুখী জনতাকে শান্ত করল, তা আলোচনা করো।

Ans. উত্তর সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ভারতবর্ষ’ গল্পের শেষদিকে বুড়ির মৃতদেহের অধিকার নিয়ে সশস্ত্র হিন্দু ও মুসলমান গ্রামবাসীদের মধ্যে যখন রক্তক্ষয়ী দাঙ্গার পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখনই বুড়ির দীর্ঘনিদ্রা ভঙ্গ হয়। বাঁশের মাচায় শায়িত বুড়ি হঠাৎ নড়ে উঠে বসতে চেষ্টা করে। দু-পক্ষের মারমুখী জনতা এবং চৌকিদার বিস্ময়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকে। বুড়ি এরপর ক্রমে দাঁড়িয়ে পড়ে। তার দু-দিকের দু-দলের ভিড় দেখে তার মুখ ব্যাজার হয়ে যায়। সেই ব্যাজার মুখেই তারপর ফ্যাক ফ্যাক করে হেসে ওঠে সে। চৌকিদারের “বুড়িমা! তুমি মরনি!”— এই বিস্ময়সূচক প্রশ্ন শুনে এরপর সে শতগুষ্টি-সহ চৌকিদারেরই মরণ কামনা করে। সমবেত জনতাও যখন চিৎকার করে একই কথা বলতে থাকে তখন বুড়ি তাদের ‘মুখপোড়া’ বলে গালি দিয়ে শাপশাপান্ত করে। বুড়ি হিন্দু না মুসলমান—এ কথা এরপর একজন জিজ্ঞাসা করলে প্রচণ্ড রেগে গিয়ে বুড়ি জনতাকে জানায় যে, তারা তাদের চোখের মাথা খেয়েছে। ‘নরকখেকো’, ‘শকুনচোখো’ ইত্যাদি গালাগাল সহযোগে সে জনতাকে জানায় যে, তারা বুড়িকে দেখে তার ধর্মপরিচয় যেহেতু বুঝতে পারছে না, তাই বুড়ি তাদের সবার চোখ গেলে দেবে। জনতাকে দূর হতেও বলে সে। কথাগুলো বলে বুড়ি নড়বড় করতে করতে সেখান থেকে বেরোলে জনতা সরে গিয়ে তাকে পথ করে দেয়। দিনের শেষ রোদ্দুরে দুরের দিকে ক্রমে অস্পষ্ট হয়ে যায় বুড়ি। এভাবেই দীর্ঘনিদ্রা থেকে জেগে ওঠা বুড়ি সম্প্রদায়ের মারমুখী জনতাকে শান্ত করেছিল।


7. “দেখতে-দেখতে প্রচণ্ড উত্তেজনা ছড়াল চারদিকে।”—প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এই উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনার বিবরণ দাও।

Ans.  প্রসঙ্গ: বাংলা সাহিত্য জগতের এক অপ্রতিম কথাশিল্পী  সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ভারতবর্ষ’ গল্পে রাঢ়বাংলায় এক পৌষমাসের অকালদুর্যোগে মৃত এক থুথুড়ে ভিখারিনির মৃতদেহের সৎকারকে ঘিরে হিন্দু-মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে যে প্রবল বিরোধের সূত্রপাত হয়েছিল, সে প্রসঙ্গেই এই মন্তব্য করা হয়েছে। 

ঘটনার বিবরণ:

বুড়িকে নিয়ে টানাপোড়েন: বৃদ্ধা ভিখারিনি প্রাণ হারিয়েছে বলে মনে করে কয়েকজন হিন্দু গ্রামবাসী তাকে শুকনো নদীর চড়ায় ফেলে আসে। কিন্তু সেদিনই বিকেলে দেখা যায় যে, কয়েকজন মুসলমান আরবি মন্ত্র পড়তে পড়তে বুড়িকে কবর দেওয়ার উদ্দেশ্যে বাজারে নিয়ে আসছে।

হিন্দু-মুসলিম বচসা: বুড়ির মৃতদেহের অধিকার নিয়ে মোল্লাসাহেবের নেতৃত্বে মুসলমানরা এবং ভটচাজমশাইয়ের নেতৃত্বে হিন্দুসম্প্রদায় প্রবল বচসায় জড়িয়ে পড়ে।

উত্তেজনার প্রসার: বাজারের দোকানপাট একে একে বন্ধ হতে শুরু করে। পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে দুই সম্প্রদায়ের বহু মানুষ অস্ত্রশস্ত্র সহ অকুস্থলে জড়ো হতে শুরু করে। বুড়ির মাচার দু-পাশে জড়ো হওয়া দু-দলের জনতা অসহায় চৌকিদারের উপস্থিতিতে পরস্পরের উদ্দেশ্যে প্ররোচনামূলক উক্তি করতে থাকে। মোল্লাসাহেব ‘নারায়েতকবির’, ‘আল্লাহুআকবর’ ইত্যাদি ধর্মীয় স্লোগান তুলে বিধর্মীদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করতে থাকেন। অন্যদিকে ভটচাজমশাই মাঝে-মাঝেই চিৎকার করে মা কালীর নামে জয়ধ্বনি দিতে লাগলেন।

আইনরক্ষকের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা: এরকম দাঙ্গা পরিস্থিতির মাঝখানেও কর্তব্য-সচেতন বিপন্ন আইনরক্ষক চৌকিদার তার লাঠিটি উচিয়ে দু-পক্ষের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকে। কোনো পক্ষ এক কদম এগোনোর চেষ্টা করলেই সে লাঠি ঠুকে ‘সাবধান’ বা ‘খবরদার’ বলে গর্জন করতে থাকে। বালির বাঁধ কিন্তু তার প্রচেষ্টা যখন বালির বাঁধের মতো ভেঙে পড়ার মুখে, ঠিক তখনই দীর্ঘ ঘুম থেকে জেগে উঠে দাঁড়িয়ে বুড়ি সেই উত্তেজনায় জল ঢেলে দেয়।


8. “ আমি কী তা দেখতে পাচ্ছিস নে ? ” – কোন প্রশ্নের উত্তরে বক্তা একথা বলেছে ? গল্পানুসারে বক্তার স্বরূপ উদঘাটন করাে।

অথবা , “ দেখা গেল এক অদ্ভুত দৃশ্য। ” – দৃশ্যটি বর্ণনা করাে। এই দৃশ্যের মাধ্যমে বুড়ি কী শিক্ষা দিয়ে গেল ?

অথবা , ভারতবর্ষ ’ গল্পে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের যে রূপটি ফুটে উঠেছে তার সম্পর্কে লেখাে। প্রসঙ্গত গল্পে বুড়ির মৃত্যুর পর পুনরায় বেঁচে ওঠার ঘটনাটি কোন তাৎপর্য বহন করে ?

Ans. বাংলা সাহিত্য জগতের এক বিখ্যাত কথাশিল্পী সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ভারতবর্ষ’ গল্পে মরণঘুম থেকে জেগে ওঠার পর উৎসাহী ও বিস্মিত জনতা বৃদ্ধাকে প্রশ্ন করে সে হিন্দু না মুসলমান। এ প্রশ্ন শুনে বৃদ্ধা প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন।

বৃদ্ধার এই উক্তিতে স্পষ্ট তিনি ধর্মপরিচয়ের ঊর্ধ্বে উদার মানবিকতাবােধে।  উদ্বুদ্ধ হওয়ার কথা বলেছেন। সকলেই যখন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বৃদ্ধাকে মূল্যায়ন করতে ব্যস্ত ঠিক তখনই তিনি দৃষ্টিভঙ্গির অভিমুখকে ঘুরিয়ে দিতে চেয়েছেন। সাধারণ মানুষের প্রবণতা এই যে তারা পূর্ব নির্দিষ্ট কিছু প্রথাবদ্ধ দৃষ্টিতে মানুষের বিচার করে। কিন্তু সেই দৃষ্টিভঙ্গি সভ্যতার পরিপন্থী ও বিদ্বেষমূলক। বৃদ্ধা এ গল্পে সম্প্রীতির বার্তা শুনিয়েছেন। মানুষকে মানবিক দৃষ্টিতে দেখার বাণী শুনিয়েছেন। ভারতবর্ষ প্রাচীনকাল থেকেই প্রেম – প্রীতির বার্তা বহন করে চলেছে। বৃদ্ধা তারই ধারক ও বাহক। এ গল্পে তিনি যেন ভারতজননীতে রূপান্তরিত। বিবদমান , বিদ্বেষ পােষণকারী , অসূয়া মনােভাবের অধিকারী ভারত সন্তানদের তিনি সংশােধন করতে এসেছেন। শান্ত – সৌম্য গ্রামবাংলার অন্তরে যে বিদ্বেষের বিষবাষ্প প্রচ্ছন্ন থাকে তাকেই তিনি বাইরে বের করে এনে দূর করতে চেয়েছেন। এ গল্পে বৃদ্ধা জাতি – ধর্মের ঊর্ধ্বে মানবিক উদারতার বাণী প্রচার করেছেন। 


9. “ হঠাৎ বিকেলে এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখা গেল। ” – অদ্ভুত দৃশ্যটি কী ? দৃশ্যটিকে অদ্ভুত বলার কারণ কী ছিল ?

Ans. সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ বিরচিত ভারতবর্য গল্পে হিন্দুদের দ্বারা ফেলে দিয়ে আসা বুড়িকে পুনরায় মুসলিম সম্প্রদায়ের লােকেরা বাজার দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। আর এই যাওয়ার দৃশ্যকে লেখক ‘ অদ্ভুত দৃশ্য ’ বলেছেন। 

শীতের অকাল দূর্যোগের দিনে বাজারের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তার বাঁকে এক বট গাছের তলায় এক বুড়ি আশ্রয় নেয়। কয়েকদিন পরে আকাশ পরিস্কার হয়ে গেল। কিন্তু বট তলায় সেই বুড়িটিকে সবাই দেখল নিঃসাড় হয়ে পড়ে আছে। অনেক বেলা গড়িয়ে গেলেও বুড়ি নড়ছে না দেখে সকলে সিন্ধান্ত নিল যে , বুড়ি মৃত। পাঁচ ক্রোশ দূরে থানা। তাই বিজ্ঞ চৌকিদার পরামর্শ দিল ‘ – নদীতে ফেলে দিয়ে এসাে ! ঠিক গতি হয়ে যাবে- যা হবার। আর এই ভাবেই বুড়ির মৃতদেহকে নদীর শুকনাে ডাঙায় ফেলে দেওয়া হলাে। আর সবাই দিগন্তে চোখ রাখল। কখন ঝাঁকে ঝাকে শকুন এসে মৃতদেহ খুবলে নেবে। অথচ বিকেলে এক অপ্রত্যাশিত দৃশ্য দেখল। যারা বুড়িকে ফেলে এসেছিল তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের। আর যারা বুড়িকে নদীর চড়া থেকে তুলে এনেছিল তারা মুসলমান। আর এই ভাবেই দুই সম্প্রদায়ের মানুষ তাকে নিজ ধর্মের মনে করে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে শুরু করে। কোনাে পক্ষই কোনাে কর্তব্য পালন করেনি বুড়ির প্রতি অথচ ক্ষমতা দেখানাের চেষ্টা করেছে। তাই দৃশ্যটিকে অদ্ভুত বলা হয়েছে। 


10. ভারতবর্ষ ’ গল্পটিতে লেখক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের যে বক্তব্য ফুটে উঠেছে তা বিবৃত করাে।

অথবা , “ আনুষ্ঠানিকতাই প্রচলিত ধর্মের সঙ্গে মানবধর্মের সবচেয়ে বড়াে বিভেদ ঘটিয়ে দেয়। ” — ভারতবর্ষ‘ গল্পটি অনুসরণে বিষয়টি বুঝিয়ে দাও। অথবা , ভারতবর্ষ ’ গল্পে লেখকের সমাজ সচেতনতার কী পরিচয় পাওয়া যায় , তা আলােচনা করাে।


Ans. সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ভারতবর্ষ ’ গল্পটিতে এদেশের গ্রামের বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে। অশিক্ষা ও অজ্ঞানতার ফলে কুসংস্কার এবং সাম্প্রদায়িকতা ভারতবর্ষকে আজও অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে রেখেছে। গল্পটিতে এই বক্তব্য তুলে ধরার পাশাপাশি লেখক গল্পের শেষে পাঠক ও জনতাকে নিয়ে যান অসাম্প্রদায়িক এক মানবিক অনুভবে। 

ভারতবর্ষ গল্পে আমরা দেখি, কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ ধর্মের নামে বিভেদ সৃষ্টি করে। মানুষের মঙ্গলের জন্য সমাজে ধর্মের উদ্ভব। কিন্তু সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে বেড়েছে মানুষে মানুষে অবিশ্বাস , ঘৃণা ও হানাহানি। মহামানবরা মানুষের সাথে মানুষের মিলনের কথা , বিশ্বাসের কথা বলেছেন ; শুনিয়েছেন ভালােবাসার বাণী। যুগে যুগে এসবই যে বৃথা প্রয়াস ছিল তা আমরা প্রত্যক্ষ করি ভারতবর্ষ গল্পটিতে। গল্পের প্রেক্ষাপট এক ছােট্ট জনপদ , কৃষিনির্ভর মানুষ , চায়ের দোকানে আড্ডা এবং পৌষের বাদলায় এক থুথুরে , জরাজীর্ণ বুড়ির সেখানে হঠাৎ উদয়। এরপর বুড়ির মৃত্যু ও তার ধর্ম নিয়ে হিন্দু ও মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিরােধ যা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রূপ নিচ্ছিল। 

ভরা শীতের টানা বৃষ্টিতে বটতলায় আশ্রয় নেওয়া বুড়ি নিঃসাড় , মৃতবৎ পড়েছিল। গ্রামের হিন্দুরা বুড়িকে মৃত মনে করে মাচায় বেঁধে দূরে নদীর ধারে ফেলে আসে। আবার মুসলিমরা তাকে বিকেলে চ্যাংদোলা করে নিয়ে আসে। দু’পক্ষই বুড়িকে তাদের ধর্মের লোেক ভাবে। এরপর দু’পক্ষই নিজেদের দাবির সমর্থনে যুক্তি , প্রমাণ ইত্যাদির অবতারণা করে। কিন্তু কোনােভাবেই সমস্যা মিটে না। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে , দাঙ্গার চেহারা নেয়। আর তখনই হঠাৎ জেগে ওঠে ‘ মৃত ’ বুড়ি। উৎসাহী একজন বুড়িকে জিজ্ঞাসা করে যে সে হিন্দু না মুসলমান। এই প্রশ্নে বুড়ি রেগে গিয়ে দু’পক্ষকেই গালাগালি দিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। ধর্ম নিয়ে দু’পক্ষের এই হানাহানি , বিরােধ বুড়ির কাছে হাস্যকর মনে হয়। বুড়ির এই চরিত্রবৈশিষ্ট্য , মনােভাবের মধ্য দিয়ে লেখক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ ভারতবর্ষের প্রকৃত স্বরূপকে তুলে ধরেছেন এই গল্পে। এই গল্পের মূল। বক্তব্যই হলাে কুসংস্কারাচ্ছন্ন , ধর্মনির্ভর কুৎসিত মানুষগুলির কাছে মানবিক সম্পর্কের চেয়ে ধর্মীয় সংস্কারই প্রধান আর বুড়ির ধর্মপরিচয়ের ঊর্ধ্বে উদার মানসিকতার। জোরে সেই বিভেদের প্রাচীর ভেঙে দেওয়ার কাহিনি। ফলে গল্পটিতে শেষপর্যন্ত লেখক আমাদের নিয়ে যান অসাম্প্রদায়িক এক মানবিক অনুভবে। 


11. “ বুড়ি , তুমি হিন্দু না মুসলমান ? ” – উক্তিটি কার ? কোন প্রসঙ্গে এই উক্তি ? উদ্ধৃতাংশটিতে বক্তা এবং উদ্দিষ্ট ব্যক্তির যে মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে , তা নিজের ভাষায় লেখাে।

Ans. সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ বিরচিত ভারতবর্ষ গল্পে একটি চেতনাহীন বৃদ্ধাকে মৃতদেহ মনে করে হিন্দু – মুসলমানের মধ্যে উত্তেজনা রহস্যময় হয়ে উঠেছিল। এই দুই সম্প্রদায়ের লােকেরাই আলােচ্য উক্তিটি করেছে। 

 আলােচ্য গল্পে এক পরিচয়হীন মলিনবস্ত্র পরিহিত দরিদ্র বৃদ্ধা পৌষের শীতে ঝড়বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে পিচের সড়কের বাঁকে ছােটো বাজারের রাস্তায় এসে শেষে গাছের গুঁড়িতে হেলান দিয়ে নিঃসাড় হয়ে যায়। গ্রামের হিন্দুরা বুড়ি মারা গেছে ভেবে চৌকিদারের পরামর্শে নদীর পাড়ে ফেলে দিয়ে আসে। আবার গ্রামের মুসলমানরা বুড়িকে মুসলমান সাব্যস্ত করে কবর দেওয়ার জন্য তুলে আনে। বুড়ির এই ধর্মপরিচয় নিয়েই গ্রামে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা প্রসঙ্গে আলােচ্য উক্তিটি করা হয়েছে। 

আলােচ্য উক্তিটিতে লেখকের গভীর মানসিকতা ধরা পড়েছে। লেখক এখানে সাম্প্রদায়িক মনােভাবকে দূর করে মানবিকতাকে বড়াে করে তুলেছেন। লেখকের বক্তব্য মানুষের ধর্মীয় পরিচয় মানুষের একমাত্র পরিচয় হতে পারে না , মানুষের অন্তর্নিহিত মনুষ্যত্ব , বিবেক তার শ্রেষ্ঠ পরিচয়। মানুষের গায়ে হিন্দু – মুসলমান বলে কিছু লেখা থাকে না , তার পরিচয় সে মানুষ। সংজ্ঞাহীন বৃদ্ধাকে মারমুখী জনতা নিজ নিজ ধর্মের মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করতে চাইলে লেখক বৃদ্ধার মুখ দিয়ে মানুষের মানবিক পরিচিতিকেই বড়াে করে তুলেছেন।


12. ছোটোগল্প হিসেবে ‘ভারতবর্ষ’-এর সার্থকতা বিচার করো।

Ans. ছোটোগল্প হিসেবে ‘ভারতবর্ষ’-এর সার্থকতা: সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ছোটোগল্প ‘ভারতবর্ষ’-এ পৌষের অকাল-দুর্যোগে রাঢ়বাংলার একটি ছোট্ট বাজারের পাশের বটগাছতলায় আশ্রয় নেয় পরিচয়হীন এক থুথুড়ে বুড়ি ভিখিরি। দুর্যোগ কাটলে সেখানে নিস্পন্দ হয়ে পড়ে থাকা বৃদ্ধাকে হিন্দু গ্রামবাসীরা মৃত ভাবে। চৌকিদারের পরামর্শে তারা বুড়ির মৃতদেহকে বাঁশের মাচায় করে নিয়ে গিয়ে শুকনো নদীর চড়ায় ফেলে দিয়ে আসে। কিন্তু সেদিন বিকেলেই মুসলমানরা সেই মাচায় করেই বুড়ির দেহটা কবর দিতে বাজারে নিয়ে আসলে সেই শবের অধিকার নিয়ে দু-সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাত বাধে। এর মধ্যে হঠাৎই দু-দলের সশস্ত্র জনতাকে হতচকিত করে বুড়ি জেগে উঠে দাঁড়ায়। একজন বুড়ির ধর্মপরিচয় জানতে চাইলে ক্রুদ্ধ বুড়ি তাদের গাল দেয়, নড়বড় করতে করতে রাস্তা ধরে চলতে থাকে এবং ক্রমশ অদৃশ্য হয়ে যায়।

গ্রামসংলগ্ন বাজারকে কেন্দ্র করেই এ গল্পের দু-দিনের এই কাহিনি গড়ে উঠেছে বলে স্থান-কাল-ঘটনাগত ঐক্য এ গল্পে রক্ষিত হয়েছে। তা ছাড়া মাঝারি আয়তনের এ গল্পে ‘ঘটনার ঘনঘটা’, ‘অতিকথন’, ‘বহু চরিত্রের সমাবেশ’, ‘তত্ত্ব’ বা ‘উপদেশ’ অনুপস্থিত। এ গল্পের বৃদ্ধা চরিত্রের মধ্য দিয়ে লেখক ভারতমাতার প্রাচীনত্ব, দারিদ্র্য এবং অসহায়তা যেমন প্রকাশ করেছেন, তেমনই এদেশ যে শুধুমাত্র হিন্দু বা মুসলমানের নয়, বরং আপামর ভারতবাসীর সেই সত্যও উন্মোচিত করেছেন। গল্পের সমাপ্তিতে বৃদ্ধার জেগে ওঠার মাধ্যমে লেখক পাঠকদের চমকিতও করে দিয়েছেন। সুতরাং ‘ভারতবর্ষ’ নিঃসন্দেহে একটি শিল্পসার্থক ছোটোগল্প।


13. “সেখানে গড়ে উঠেছে একটা ছোট্ট বাজার” - বাজার টি কোথায় অবস্থিত ছিল?  এই বাজারটি সম্পর্কে যা জানো লেখো।

Ans: সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের লেখা ভারতবর্ষ গল্পে আমরা দেখতে পাই রাঢ় বাংলার ছোট্ট একটি গ্রাম্য বাজার এর চিত্র। পিচের রাস্তার পাশে পুরনো আদ্দিকালের এক বটগাছের পাশে রাস্তা যেখানে বাঁক নিয়েছে সেখানে একটা বাজার গড়ে উঠেছিল।

এটিকে যথার্থ অর্থে বাজার বলা চলে না। সব মিলিয়ে গোটা দুই তিন চায়ের দোকান ছিল। সন্দেশের দোকান ছিল দুটি। পোশাকের দোকান তিনটি। এছাড়া ছিল মনোহারী দোকান এবং দুটি মুদিখানার দোকান। বাজার টির উত্তর দিকে ছিল একটি বিশাল মাঠ এবং বাঁশবন ছিল পেছনদিকে। আশেপাশে আর বড় বাজার না থাকায় চারপাশের মানুষ প্রতিদিন এখানেই আসতো কেনাকাটা করতে।

এটি রাঢ় বাংলার একটি গ্রামের চিত্র। সে সময়ে বিদ্যুৎ সহজলভ্য ছিল না। গ্রামের অন্যান্য অংশে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিলনা কিন্তু বাজারটিতে বিদ্যুৎ ছিল। এমনকি রাত 9 টা পর্যন্ত এই বাজার খোলা থাকতো। সন্ধের পর যখন গ্রামগুলো অন্ধকারে ডুবে যেত সে সময় চারিদিকের মানুষ যারা আড্ডাপ্রিয় তারা এখানে আসতে আড্ডা দিতে। এবং রাত ন'টার পর সবাই যে যার বাড়িতে চলে যেত এবং সমগ্র এলাকা জনহীন হয়ে পড়তো। দুই একটা নেড়িকুত্তা ঘুরে বেড়াতে দেখা যেত বিদ্যুতের আলোতে। আর প্যাঁচার ডাক শোনা যেত পাশের বট গাছ থেকে।


14. “কতক্ষণ সে এই মারমুখী জনতাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারত কে জানে”- সে বলতে কার কথা বলা হয়েছে? জনতা মারমুখী হয়ে উঠেছিল কেন?

Ans: সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের লেখা ভারতবর্ষ গল্পটিতে আমরা এই উদ্ধৃত অংশটি দেখতে পাই। এখানে সে বলতে রাঢ় বাংলার এক গ্রামের চৌকিদারের কথা বলা হয়েছে।

তখন ছিল শীতকাল, তা সত্বেও বেশ কয়েকদিন ধরে দুর্যোগ চলছিল। ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনার কথা ভেবে চাষিরা অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়েছিল। সে সময়ই চায়ের দোকানের আড্ডায় হঠাৎই এক অচেনা বৃদ্ধা প্রবেশ করে। কয়েকদিন পর তার মৃতদেহ পাওয়া যায় মোড়ের বটগাছের খাঁজের মধ্যে। ভেবে নেওয়া হয় সে মারা গেছে। পাড়ার হিন্দুরা মিলে তার দেহ নদীর ধারে ফেলে রেখে আসে। আবার বিকালে কয়েকজন মুসলিম তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে সৎকার করার জন্য। কারণ গ্রামের মোল্লা সাহেব পাড়ার অন্যান্য মুসলিমদের জানিয়েছেন এই বুড়িকে নাকি কোন এক সময়ে তিনি শহরে যাওয়ার পথে কলমা পড়তে শুনেছেন। তখন ভট্টাচার্য মশাই এর সাথে মোল্লা সাহেবের তর্কাতর্কি শুরু হয়। ভট্টাচার্য মশাই দাবি করেন মোল্লা সাহেবের সাথে একই বাসে শহরে যাওয়ার সময় তিনি ওই বুড়ি কে শ্রীহরি বলতে শুনেছেন। এভাবে গ্রামবাসীরা হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায়ে ভাগ হয়ে যায়। এই দ্বন্দ্ব তীব্রতর হয়ে ওঠে। দুপক্ষই মৃতদেহ কে নিজেদের সম্প্রদায়ের বলে দাবি করে। চার পাশের দোকানের ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায়।গ্রামবাসীরা অস্ত্র নিয়ে ছুটে আসে। বুড়ির মৃতদেহ কে কেন্দ্র করে গ্রামের লোক হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায়ে ভাগ হয়ে কেউ আল্লাহু আকবর কেউ আবার জয় মা কালী বলে চিৎকার করে মৃতদেহ অধিকারের জন্য পরস্পরের দিকে মারমুখী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এই মারমুখী জনতাকে চৌকিদার কতক্ষণ ঠেকিয়ে রাখতে পারবেন সেব্যাপারেই সংশয় প্রকাশ পেয়েছে উদ্ধৃত উক্তিতে।


15. “শেষ রোদের আলোয় সে দূরের দিকে ক্রমশ আবছা হয়ে গেল” - কার কথা বলা হয়েছে? সে ক্রমশ আবছা হয়ে গেল কেন?

Ans: সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ তার ভারত বর্ষ গল্পের মাধ্যমে রাঢ় বাংলার এক গ্রামের ঘটনা দিয়ে সমগ্র ভারতবর্ষের তৎকালীন সমাজের সাম্প্রদায়িকতার ছবি এঁকেছেন। ঘটনাচক্রে আমরা দেখতে পাই এক অচেনা বুড়ি কে কেন্দ্র করে হিন্দু এবং মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রবল সংঘাত সৃষ্টি হয়েছিল। এখানে সেই বৃদ্ধার কথাই বলা হয়েছে।

অচেনা বৃদ্ধাকে গ্রামের বটগাছের খোদল এর মধ্যে নির্জীব হয়ে পড়ে থাকতে দেখে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। গ্রামের হিন্দুরা মিলে তাকে নদীর চরে ফেলে আসে, আবার গ্রামের মুসলমানরা তাকে নদীর চর থেকে তুলে নিয়ে আসে নিজ ধর্মমত অনুযায়ী তার সৎকার করার জন্য, কবরস্থ করার জন্য। এই নিয়ে হিন্দু এবং মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রবল সংঘাত শুরু হয়। হিন্দুদের প্রতিনিধিত্ব করেন ভট্টাচার্য মশাই এবং মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব করেন মোল্লাসাহেব। জনগণও দু'পক্ষে ভাগ হয়ে জয় মা কালী এবং আল্লাহু আকবর বলতে থাকে। এই সময়ে একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। বুড়ির মৃতদেহ হঠাৎই নড়ে ওঠে এবং সে উঠে দাঁড়ায়। চারিদিকে ভিড় দেখে সে এক বিকৃত হাসি হাসে। এরপর রাস্তা পার হয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়। ধর্মান্ধ মানুষেরা সরে গিয়ে তাকে পথ বার করে দেয়। এই বুড়ি যেন ভারতবর্ষের অন্তরাত্মা, সে দূরের দিকে এগোতে থাকে এবং ক্রমশ অস্পষ্ট হতে থাকে সেখানে উপস্থিত অধিবাসীদের চোখে।


16. “আমি কি তা দেখতে পাচ্ছিস নে?”-  কোন প্রশ্নের উত্তরে বক্তা একথা বলেছে? গল্প অনুসারে বক্তার স্বরূপ উদঘাটন করো। 

Ans: সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের লেখা ভারতবর্ষ গল্পে আমরা উদ্ধৃত অংশটি পাই। অচেনা বুড়ির মৃতদেহটি যখন হঠাৎই নড়ে ওঠে তখন সেখানে উপস্থিত অধিবাসীরা তার কাছে জানতে চায় সে হিন্দু নাকি মুসলমান। বুড়ি বরাবরই একটু মেজাজি। তাই এই প্রশ্নের উত্তরে সে জবাব দেয়- “আমি কি তা দেখতে পাচ্ছিস নে?”

প্রথমদিন চায়ের দোকানে যখন হঠাৎ এই বৃদ্ধার দেখা মেলে তখন থেকেই দেখা গিয়েছিল সে অত্যন্ত কড়া মেজাজের, কারো কথা কে খুব একটা পাত্তা দেয় না। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়াতে সে আশ্রয় নিয়েছিল বট গাছ তলে। কয়েকদিন পর বৃষ্টি থামলে তাকে চেতনাহীন অবস্থায় পাওয়া যায়। তারপর তার মৃতদেহ সৎকার করার দাবিকে কেন্দ্র করে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিভেদ তৈরি হয় এবং দাঙ্গার আকার নেয়। আর তখনই নাটকীয় ভাবে গল্পের পট-পরিবর্তন ঘটে। বৃদ্ধা উঠে দাঁড়ায়। যে গ্রামবাসী তাকে নিজেদের সম্প্রদায়ের দাবি করে পরস্পরের প্রতি অস্ত্র উঁচিয়ে ছিল তাদের দেখে বুড়ি বিকৃত হাসি হাসে। এবং বলতে থাকে “তোরা মর তোরা মর মুখ পোড়ারা”। এখানে বৃদ্ধা হিন্দু মুসলমান এই ধর্মীয় বেড়াজালের ঊর্ধ্বে উঠে মানবতাকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে। এবং ধর্মান্ধদেরকে সে যেন দু পায়ে মুচড়ে, পদপিষ্ট করে এগিয়ে গেছে নতুন এক সমাজের উদ্দেশ্যে।   


17. “লদীতে ফেলে দিয়ে এসো”- উক্তিটি কার? কোন পরিস্থিতিতে তার এই উক্তি?

অথবা  

 “বিজ্ঞ চৌকিদারের পরামর্শ মানা হলো”- চৌকিদার কি পরামর্শ দিয়েছিল? সেই পরামর্শ মেনে কি করা হয়েছিল?

Ans: উদ্ধৃত অংশটি সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের লেখা ভারতবর্ষ ছোটগল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে রাঢ় বাংলার কোন এক গ্রামের এক চৌকিদার এক অচেনা বুড়ির মৃতদেহ কে উদ্দেশ্য করে গ্রামবাসীদের কে বলেছিলেন নদীতে ফেলে দিয়ে এসো।

তখন পৌষ মাস, শীতকাল হওয়া সত্ত্বেও বেশ কয়েকদিন ধরে দুর্যোগ চলছিল। গ্রামবাসীরা বিচলিত হয়ে পড়েছিল ফসলের ক্ষতির আশঙ্কায়। অনেকে আবার চায়ের দোকানে আড্ডায় বসে ছিল সন্ধ্যা বেলা। তখন সবাইকে অবাক করে এক অচেনা বৃদ্ধা বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে হঠাৎই প্রবেশ করে চায়ের দোকানে। বৃদ্ধা খর্বাকৃতির হলেও অত্যন্ত মেজাজি। উপস্থিত গ্রামবাসীরা তাকে কোন প্রশ্ন করলে সে কাঠখোট্টা জবাব দিতে থাকে। এরপর সে আশ্রয় নেয় গ্রামের রাস্তার বাঁকের  মুখের এক বটগাছ তলায়। কয়েকদিন পর যখন আবহাওয়া ভালো হলো, বৃষ্টি থামলো গ্রামবাসীরা তখন বৃদ্ধাকে খুঁজে পায় বটগাছ তলায়নিঃ সাড় অচৈতন্য অবস্থায়। চা-বিক্রেতা জগা সবাইকে জানায় যে বুড়িটা নিশ্চয়ই মরে গেছে। বুড়ির নারী পরীক্ষা করেও প্রাণ আছে কিনা বোঝা যায় না। তখনই খবর দেওয়া হয় গ্রামের চৌকিদারকে। চৌকিদার গ্রামবাসীদেরকে খবরটা থানায় পৌঁছে দিতে বারণ করে কারণ থানা সেখান থেকে অনেকদূর, পুলিশ আসতে প্রায় রাত দুপুর হয়ে যাবে। তাই এত হাঙ্গামায় গিয়ে কাজ নেই। পাছে মৃতদেহের দুর্গন্ধ বেড়ে যায়! তাই সমস্ত সমস্যা থেকে গ্রামবাসীদের মুক্তি দেওয়ার জন্য তিনি বুড়ির মৃতদেহটিকে নদীতে ফেলে আসার পরামর্শ দেন।

এবং চৌকিদারের পরামর্শ মতোই গ্রামের হিন্দুরা দুই মাইল দূরে অবস্থিত নদীর চড়ায় বাঁশের দোলায় করে বুড়িকে নিয়ে গিয়ে ফেলে আসে এবং বুড়ির শরীর উজ্জ্বল রোদে তপ্ত বালিতে চিৎ হয়ে পড়ে থাকে।


Google News এ আমাদের ফলো করুন


Gksolves Google News


ঘোষণা: বিনামূল্যে আমাদের দেওয়া নোটস, সাজেশান, প্রশ্ন উত্তর ইত্যাদি স্টাডি ম্যাটেরিয়াল PDF এবং ভিডিও ক্লাস ভালো লাগলে, আমাদের এই পোস্টের লিংক আপনার বন্ধুদের ফেসবুকWhatsApp এ শেয়ার করে তাদের পড়ার সুযোগ করে দিন।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.